কাশ্মিরে ২ সেনা ও এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম ।  ১৮ আগস্ট ২০১৬

কাশ্মিরে ২ সেনা ও এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত

কাশ্মিরে ২ সেনা ও এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত

‘একজন কাশ্মিরী বেঁচে থাকা পর্যন্ত আমরা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে যাবো’ লেখা প্লে কার্ড হাতে বিক্ষোভ করছে কাশ্মিরী তরুণীরা : ইন্টারনেট‘একজন কাশ্মিরী বেঁচে থাকা পর্যন্ত আমরা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে যাবো’ লেখা প্লে কার্ড হাতে বিক্ষোভ করছে কাশ্মিরী তরুণীরা : ইন্টারনেট

ভারত অধিকৃত কাশ্মিরে একটি গাড়িবহরে সন্দেহভাজনদের স্বাধীনতাকামীদের অতর্কিত হামলায় দুই সৈন্য ও এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন। মাসাধিককালের আন্দোলন-সহিংসতায় উত্তাল কাশ্মিরের একজন কর্মকর্তা গতকাল এ খবর নিশ্চিত করেছেন।

শ্রীনগর থেকে ৬০ কিলোমিটার পশ্চিমে বারামুল্লা জেলায় দুটি সেনা ট্রাক ও একটি পুলিশের গাড়ি টহল দেয়ার সময় অজ্ঞাত বন্ধুকধারীরা গুলিবর্ষণ শুরু করলে এই তিনজন নিহত হন। জেলা পুলিশ সুপার ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, ‘দুই সৈন্য ও এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আরো দু’জন সেনা এবং একজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।’

ভারতীয় সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, পালিয়ে যাওয়া হামলাকারীদের খোঁজে বড় ধরনের অভিযান শুরু করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।

কাশ্মিরের বিুব্ধ জনতার বিক্ষোভ ঠেকাতে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে কাশ্মিরে রাতের বেলা সেনা টহল জোরদার করা হয়েছে। গত মাসে জনপ্রিয় তরুণ স্বাধীনতাকামী নেতা বুরহান ওয়ানি নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে নিহত হওয়ার পর থেকে কাশ্মিরে বিক্ষোভ-ধর্মঘট ঠেকাতে কারফিউ বলবৎ রয়েছে। কারফিউ উপেক্ষা করে কাশ্মিরিরা ভারতবিরোধী প্রতিবাদ-বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে।

হিমালয় অঞ্চলের এই এলাকাটিতে জনতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে ৬৫ জন বেসামরিক তরুণ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো কয়েক হাজার মানুষ। ২০১০ সালের পর এটি হচ্ছে কাশ্মিরে সবচেয়ে ভয়াবহ হতাহতের ঘটনা।

কাশ্মির অঞ্চল ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিভক্ত হয়ে রয়েছে জাতিসঙ্ঘের নিয়ন্ত্রণ রেখায়। তবে উভয় দেশই কাশ্মিরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দাবি করেছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দুটি যুদ্ধ হয়েছে। কাশ্মিরিরা ১৯৮৯ সাল থেকে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত রয়েছে। তারা স্বাধীনতা অথবা পাকিস্তানের সাথে ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের সংযুক্তির দাবিতে এ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।

স্বাধীনতা দিবসে শ্রীনগরে কারফিউর মধ্যে বেসামরিক লোকদের সাথে সংঘর্ষে ১০ পুলিশ আহত হয়। পরে আহতদের একজন হাসপাতালে মারা যায়।

মোদির বক্তব্যে সমর্থন নেই যুক্তরাষ্ট্রের

এ দিকে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে কাশ্মির এমন একটি সমস্যা, যার সমাধান করতে ভারত ও পাকিস্তান উভয়কে এগিয়ে আসতে হবে। সোমবার ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই দৃষ্টিভঙ্গির কথা জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা। তবে আজাদ কাশ্মিরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে অভিযোগ ভারত তুলেছে সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

এর আগে ওই ভারতের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারত অধিকৃত কাশ্মিরে চলমান সামরিক নিপীড়নের মীমাংসা করতে অস্বীকৃতি জানান। ওই ভাষণে উল্টো তিনি আজাদ কাশ্মির ও বেলুচিস্তানে ‘নিপীড়নের’ অভিযোগ আনেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। ওই অঞ্চল দুটির জনগণের বিরুদ্ধে কথিত নৃশংসতার জন্য পাকিস্তানকে বিশ্বের কাছে জবাবদিহি করতে হবে বলে মোদি দাবি করেন।

সোমবার বিকেলে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয়ের প্রেস অফিসের পরিচালক এলিজাবেথ ট্রুডোকে মোদির বক্তব্যের বিষয়ে মন্তব্য করতে অনুরোধ জানান এক ভারতীয় সাংবাদিক। ওই সাংবাদিক একই সাথে আজাদ কাশ্মিরের সব নাগরিককে ‘ভারতীয়’ উল্লেখ করে তাদের জন্য ‘যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলার সময়’ এসেছে দাবি করেন। এ ছাড়া বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টিগোচর করতে পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তাদের মোদির নির্দেশ দেয়ার বিষয়টিও তিনি এলিজাবেথ ট্রুডোকে স্মরণ করিয়ে দেন।

এর জবাবে ট্রুডো বলেন, ‘আমি মোদির মন্তব্যের বিষয়ে কথা বলবো না। আপনার জানা উচিত, কাশ্মির বিষয়ে আমাদের অবস্থান অপরিবর্তিত আছে। কাশ্মির ইস্যুতে যেকোনো আলোচনার গতি, প্রকৃতি, সুযোগ দুই পক্ষকেই নির্ধারণ করতে হবে’। একই সাথে এই মার্কিন কর্মকর্তা এই সমস্যার সমাধানের জন্য ভারত ও পাকিস্তানকে এক সাথে কাজ করতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা সব ইতিবাচক পদক্ষেপকে সমর্থন জানাই যাতে ভারত ও পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে পদক্ষেপ নিতে পারে’। যদিও কাশ্মির ইস্যুতে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ আরেকটি যুদ্ধে লিপ্ত হতে পারে বলে ইতঃপূর্বে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে পাকিস্তান।

আজাদ কাশ্মিরে পাকিস্তানের সহিংসতার অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার পাশাপাশি এলিজাবেথ ট্রুডো কাশ্মির উপত্যকায় ভারতীয় বাহিনীর সাথে বেসামরিক লোকদের সহিংসতার কথা উল্লেখ করে উভয় পক্ষকে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজতে উৎসাহিত করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সঙ্ঘাতের বিষয়ে অবগত আছি। আমরা সহিংসতার বিষয়ে উদ্বিগ্ন এবং আমরা সব পক্ষকে শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজার চেষ্টায় উৎসাহিত করি’।

‘পাকিস্তানে যাওয়া আর জাহান্নামে যাওয়া সমান’

রয়টার্স জানায়, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর বলেছেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়া আর জাহান্নামে যাওয়া সমান কথা’। গত মঙ্গলবার কাশ্মিরে দলীয় সমর্থকদের এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। এর আগের দিন সোমবার ভারতীয় সেনারা যে পাঁচজন বিক্ষোভকারীকে হত্যা করেছে, এ দিন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আইজাজ চৌধুরী ভারতের পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্করকে কাশ্মির সমস্যা নিয়ে সংলাপের আমন্ত্রণ জানান।

গত ৮ জুলাই কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনের নেতা বুরহান ওয়ানি ভারতীয় বাহিনীর হাতে নিহত হলে এ নিয়ে ফুঁসে ওঠে সমগ্র উপত্যকার জনগণ। বুরহানের নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে কাশ্মিরজুড়ে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে জনতা। বিক্ষোভ দমন করতে সাধারণ জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একপর্যায়ে কাশ্মিরে কারফিউ জারি করে পুলিশ। প্রায় এক মাস ধরে কারফিউর মধ্যেও চলছে সাধারণ জনতার বিক্ষোভ-ধর্মঘট। এ সময় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে ৬৫ জন। আহত হয়েছে ৫ হাজারের বেশি বেসামরিক লোক

 

 

 

Related posts