কব্জি ব্যথায় যা করবেন

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কব্জি ব্যথায় যা করবেন

কব্জি ব্যথায় যা করবেন

কয়েক দিন থেকে হাতের কব্জিতে অসহ্য ব্যথা অনুভূব করছি। বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তজ্জনিতে বেশি ব্যথা। কখনও কখনও বৃদ্ধাঙ্গুলির পাশ ঘেঁষে খানিকটা ওপরের দিকেও ব্যথা যায়। রাতে হাত অবশ হয়ে আসে। অস্থির অনুভূতির কারণে রাতে ঘুম ভেঙে যায়। পরীক্ষা করে দেখালাম বৃদ্ধাঙ্গুল কিছুটা দুর্বল হয়ে গেছে। জানালাম, এ রোগের নাম কারপাল টানেল সিনড্রোম।

কেন হয়

হাইপোথাইরয়েডিজম, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, গাউট, নিয়মিত মদ্যপান, ওজন বাড়া, গর্ভধারণ করা প্রভৃতি কারণের জন্য এ কারপাল টানেল ছোট হয়ে যায়। নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াও হতে পারে। মধ্যবয়সের নারীই বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। কব্জির হাড় ভেঙে সঠিকভাবে জোড়া না লাগলে বা দীর্ঘদিন প্লাস্টার করে রাখার ফলে কারপাল টানেলে চাপ পড়তে পারে।

কী লক্ষণ দেখা যায়

এ রোগের কারণে বুড়ো আঙুল থেকে মধ্যমা পর্যন্ত তিন আঙুলে শিরশির ও অবশ অনুভূতি, সঙ্গে ব্যথা থাকতে পারে। সাধারণত বুড়ো আঙুল ও মাঝের তিন আঙুল আক্রান্ত হলেও কনিষ্ঠ আঙুল কখনও আক্রান্ত হয় না।

রাতের বেলায় রক্তসঞ্চালন কম হওয়ার কারণে ব্যথা বৃদ্ধি পায়। বুড়ো আঙুলের গোড়ার মাংসপেশি ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায় ও আঙুল দুর্বল হয়ে যায়, কাজ করলে ব্যথা বাড়ে। হাত মৃদু ঝাঁকালে বা ঝুলিয়ে রাখলে আরাম অনুভব হয়। ব্যথা কব্জি থেকে ওপরের দিকে উঠতে পারে।

পরীক্ষা

রোগ নির্ণয়ের জন্য নার্ভ কনডাকশন ভেলোসিটি পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। নার্ভ অনেকটা ইলেকট্রিক তারের মতো, এর ভেতর দিয়ে তথ্যগুলো বৈদ্যুতিক তরঙ্গের মতো প্রবাহিত হয়।

ইলেকট্রিক মিস্ত্রিরা যন্ত্রপাতির বিদ্যুৎ চলাচলের গতি মাপতে যেমন মিটার ব্যবহার করেন, নার্ভ কনডাকশন টেস্টের মাধ্যমে

নার্ভের ভেতরের বিদ্যুৎ চলাচলের গতি ও পরিমাণ নির্ণয় করা হয়।

এরপর আসে ইএমজি বা ইলেকট্রোমায়োগ্রাম পরীক্ষা, যার মাধ্যমে মাংসপেশির নার্ভ সাপ্লাই সম্পর্কে বোঝা যায়। কব্জি ও নার্ভের গঠন বোঝার জন্য কব্জির সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করা যেতে পারে। এছাড়া সহায়ক পরীক্ষা হিসেবে আক্রান্ত হাতের এক্স-রে, ডায়াবেটিস পরীক্ষা, থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের পরীক্ষা অপরিহার্য।

 

মৃদু ক্ষেত্রে প্রথমদিকে কব্জির বিশ্রাম, যার জন্য কব্জির ওপর চাপ পড়ে এমন সব ধরনের কাজকর্ম পরিহার করা উচিত। যেমন-

* কাপড় ধোয়া

* টিউবওয়েল চাপা

* একটানা লেখালেখি করা

* দা, কোদাল বা কুড়াল দিয়ে কিছু কাটাকাটি করা

* ড্রিল মেশিন ব্যবহার করা

* হাতে ভারি ওজন বহন করা

* রাতে স্পি¬ন্ট বেঁধে ঘুমানো কার্যকরী।

* সঙ্গে ব্যথার ওষুধ এবং স্টেরয়েড ইনজেকশন কিছুটা সুফল দেয়। ব্যথা বেশি হলে অনেকে সরাসরি অবশের ইনজেকশন দিয়ে থাকেন। এতে সাময়িক উপকার পাওয়া যেতে পারে, ইনজেকশন নার্ভের মধ্যে ঢুকে গেলে হাত আরও অবশ হয়ে যেতে পারে।

এসব চিকিৎসায় আশানুরূপ ফল পাওয়া না গেলে অপারেশন করা যায়। এ চিকিৎসায় অপারেশন কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং ফলাফল আশানুরূপ। অপারেশনের পর ব্যথা সঙ্গে সঙ্গেই কমে যায়। আধুনিক সময়ে অ্যান্ডোসকোপির মাধ্যমে কম কাটাছেঁড়া করে এ অপারেশন করা সম্ভব।

নিউরোসার্জন, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোসায়েন্স, ঢাকা

 

 

Related posts