শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করছেন সেলিনা হায়াৎ আইভীকে পুনর্নির্বাচিত করার মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জের জনগণ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় গুরুত্ব দিয়েছে বলে ।
এজন্য নারায়ণগঞ্জের মানুষকে ধন্যবাদ দিয়েছেন ২০০৯ সাল থেকে টানা প্রায় আট বছর সরকারের নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে প্রায় ৮০ হাজার ভোটে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হন নৌকার প্রার্থী আইভী। এর আগেও দুই দফায় নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।
ভোটে বিজয়ের পরদিন শুক্রবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে আসেন নারায়ণগঞ্জের নবনির্বাচিত মেয়র।
তাকে ভোট দেওয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “একটা সরকারের ধারাবাহিকতা যদি থাকে, তাহলে উন্নয়ন অব্যাহত থাকে। এ বিষয়টি নারায়ণগঞ্জের মানুষ বুঝতে পেরেছে।”
আইভী পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন নতুন প্রকল্প নিতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে দেশের উন্নয়নের যে ক্ষতি হয়, তার দৃষ্টান্ত হিসেবে ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ের কথা বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে যেসব অর্জন করেছিল, তা ২০০৮ সালে এসে আর পায়নি। ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আসার পর অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেওয়ায় এটা হয়েছিল।
পরিসংখ্যান তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ ও ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ দেশে খাদ্য ঘাটতি পেয়েছে।
“আমরা ’৯৬ সালে এসে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেলাম। যখন ক্ষমতা ছাড়লাম তখন দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন চার হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। আর ২০০৯ সালে এসে পেলাম তিন হাজার ২০০ মেগাওয়াট।”
তিনি বলেন, “পরিবর্তন ভালো, এটা ঠিক। কিন্তু এরা (বিএনপি) ক্ষমতায় আসলেই উন্নয়ন ব্যাহত হয়।”
বিএনপিকে ভোটাররা কী কারণে ভোট দেয়, সে প্রশ্নও তুলেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
২০০১ সালে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভের পর দলটির নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মো. মুজাহিদকে মন্ত্রিসভার সদস্য করে বিএনপি। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এরইমধ্যে ফাঁসি কার্যকর হয়েছে কুখ্যাত আল-বদর বাহিনীর এই দুই শীর্ষ নেতার।
এই বিষয়গুলো উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “এরা জাতির কাছে মুখ দেখায় কীভাবে? মানুষও এদের ভোট দেয় কীভাবে?”
নারায়ণগঞ্জের ভোট নিয়ে বিএনপির প্রার্থীর পাশাপাশি দলটির নেতারা সন্তোষ প্রকাশ করলেও ফল প্রকাশের পর গণনায় ত্রুটির আশঙ্কার কথা বলছে।
বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেনের ওই কথা ধরে তার নির্বাচনী প্রচার সেলের সমন্বয়ক দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় শুক্রবার বলেছেন, “দৃশ্যত গতকালের (বৃহস্পতিবার) নির্বাচনটা ফেয়ার, ফলাফলটা আনফেয়ার। এই ফলাফল অপ্রত্যাশিত এবং বিশ্বাসযোগ্য নয়।
“নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকবেই। আমরা কথাটা হলো, ভোটের ফলাফলের যে ব্যবধানটা, এটা অত্যন্ত অবিশ্বাস্য।”
এ বিষয়ে ‘বিচার বিভাগীয়’ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টিতেও সুষ্ঠ নির্বাচনের দৃষ্টান্ত হওয়ায় এ ভোট নিয়ে বিএনপির এই অবস্থানের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিএনপি এখন কথা খুঁজে পাচ্ছে না। জুডিশিয়াল ইনকোয়ারি চাচ্ছে।
“তারা যে অভিযোগ করে আসছিল, নারায়ণগঞ্জবাসী তার উপযুক্ত জবাব দিয়েছে।”
বিএনপির জন্ম ‘অবৈধভাবে’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “বিচারপতি সায়েমকে অস্ত্র ঠেকিয়ে জিয়াকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিতে বাধ্য করে।”
১৯৭৮ সালের হ্যাঁ/না ভোট, ১৯৭৯ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এবং তারপরে সংসদ নির্বাচনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “ভোট চুরি এবং ইলেকশন ম্যানুপুলেশনের মাধ্যমে তাদের জন্ম। মানুষের স্মৃতিশক্তি মনে হয় কম। তারা ভুলে যায়।
“ভোট চুরির অপরাধে ’৯৬ সালের ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হন। যারা এতো কথা বলেন, তারা সেই কথা ভুলে গেছেন।”
বিএনপিকে নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “তারা ক্ষমতায় আসলে উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে যায়্। নিজেদের উন্নয়ন করে, চুরি করে আর সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে।”
২০১৫ সালের প্রথম তিন মাসে বিএনপি জোটের লাগাতার হরতাল-অবরোধে সহিংসতায় প্রাণহানির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “বিরোধী দলে থাকতেই এই ধরনের নির্যাতন করে! খোদানাখাস্তা, এরা কী ধরনের অত্যাচার করবে?
“এরা আবার বড় বড় কথা বলে। মানুষ যে এদের ধরে ধরে পোড়ায় না, এটাই তো বেশি।”
নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হওয়ায় ওই এলাকার নাগরিক, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।