শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ১১ জানুয়ারি ২০১৭
আজ বুধবার বিকেলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন নিয়ে । দলের প্রস্তাবনা কমিটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংবিধানের মধ্যে থেকেই নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনে প্রস্তাব দেবে দলটি।
এ বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে আইন করার দাবি উঠলেও সময় স্বল্পতার জন্য এখনই তা প্রণয়নের পক্ষে নন শাসক দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতিকে সব ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
নেতারা আরও জানান, অতীতের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে রাষ্ট্রপতিই সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনের অন্য সদস্য নিয়োগ দানের প্রস্তাব দেবেন।
বাংলাদেশ সংবিধানের ১১৮ এর (১) ধারা অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন নিয়োগে রাষ্ট্রপতির ইচ্ছাই সব। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।’
অতীতের মতো ইসি গঠনের পক্ষে দলটির নেতারা বলছেন, সংবিধানের ১৫২ এর (১) অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে ‘আইন’অর্থ- কোনো আইন, অধ্যাদেশ, আদেশ, বিধি, প্রবিধান, উপ-আইন, বিজ্ঞপ্তি ও অন্যান্য আইনগত দলিল এবং বাংলাদেশে আইনের ক্ষমতাসম্পন্ন যে কোনো প্রথা বা রীতি।”
সে ক্ষেত্রে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সার্চ কমিটি গঠনের পর যে গেজেট ঘোষণা করেছিলেন, সেটিও এক ধরনের আইন। একইসঙ্গে এবারও রাষ্ট্রপতি যে প্রক্রিয়ায় ইসি নিয়োগ দেবেন সেটিও একটি আইনে পরিণত হবে। তবে ইসি নিয়োগে পূর্ণাঙ্গ একটি আইনের ঘাটতি আছে; কিন্তু বিষয়টি সময় সাপেক্ষ।
আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, যেহেতু ফেব্রুয়ারি মাসের ৮ তারিখে বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে তাই এ স্বল্প সময়ের মধ্যে ইসি গঠনের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আইন করা সহজ নয়।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কাছে এ বিষয়ে চানতে চাইলে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘আইনের বিষয়টি লম্বা প্রক্রিয়ার বিষয়। এজন্য সময় লাগবে। আইন করতে হলে খসড়া হবে, সংশোধন হবে। সংসদে যাবে। উত্থাপন হবে, তারপর কমিটিতে যাবে। তাই আইন করার প্রক্রিয়া শুরু হলেও কমপক্ষে দুই থেকে তিন মাস লেগে যাবে।’
তিনি বলেন- ‘আর আইন করতে হলে রাষ্ট্রপতিকে চাইতে হবে। তারপরই এ বিষয়ে কাজ শুরু হবে। তাই আমি যতটুকু বুঝি তাতে আইন করে কমিশন গঠন করার মতো পর্যাপ্ত সময় নেই।’
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম ও প্রস্তাবনা কমিটির সদস্য ড. আবদুুর রাজ্জাক জাগো নিউজকে বলেন, ‘৩৫ বছরে যেহেতু এ বিষয়ে আইন হয়নি, তাই এত তাড়াহুড়ো করে আইন করার কোনো কারণ নেই। তাছাড়া একটি আইন প্রণয়নের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের ব্যাপার আছে।’
আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও প্রস্তাবনা কমিটির আরেক সদস্য আবদুুল মতিন খসরু জাগো নিউজকে বলেন, ‘সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতিকে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশন ও চারজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দান করবেন।’
অপরদিকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ করতে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের নাম ঘোষণা করলেও পরে সদস্যের তালিকা খানিকটা দীর্ঘ করে ১৯ সদস্য করা হয়।
মঙ্গলবার রাতে দলের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১১ জানুয়ারি বুধবার বিকেল ৪টায় নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের এক মত-বিনিময় সভা বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিতব্য মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করবেন।
নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রস্তাব ও সুপারিশমালা সম্পর্কে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় দলের সভাপতির ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত প্রস্তাব ও সুপারিশমালা প্রণয়নে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচ টি ইমাম।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সব দলের সঙ্গে সংলাপ শেষে সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে বর্তমান ইসি গঠন করেছিলেন। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি এই কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে।