আসছে ই-পাসপোর্ট, অধিদপ্তর শতভাগ ডিজিটাল, বললেন মহাপরিচালক

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ৬  সেপ্টেম্বর   ২০১৬

আসছে ই-পাসপোর্ট, অধিদপ্তর শতভাগ ডিজিটাল, বললেন মহাপরিচালক

ই-পাসপোর্ট

পাসপোর্টে লাগানো একটি মাত্র মাইক্রো চিপ। তাতেই থাকবে ব্যক্তি মাত্রের সকল তথ্য। নির্ধারিত ইমিগ্রেশন গেটে বসানো মেশিনে পাসপোর্টটি ছুঁয়ে দিলেই তথ্য যাচাই হয়ে যাবে। এরপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যাবে গেট।  ইমিগ্রেশন অফিসারের কাজ হবে শুধু সিল দিয়ে পাসপোর্টটি ফেরত দেওয়া। তখন আর তথ্য যাচাইয়ের জন্য ইমিগ্রেশন অফিসারের দিকে তাকিয়ে কোন যাত্রীকে দীর্ঘক্ষণ  লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না।

দেশে চালু হতে যাচ্ছে ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্ট (ই-পাসপোর্ট) আর তাতে যাত্রীদের ইমিগ্রেশন  সহজ হয়ে উঠবে সে কথাই বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান।

জানালেন, মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) পাশাপাশি ই-পাসপোর্ট শিগগিরই  চালু হতে যাচ্ছে।

একান্ত সাক্ষাতকারে মাসুদ রেজওয়ান বলেন, পাসপোর্ট অধিদপ্তর এখন শতভাগ ডিজিটাল। জরুরি প্রয়োজনে মাত্র ৩-৪ ঘণ্টায় পাসপোর্ট ডেলিভারি দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে এ অধিদপ্তর।

মঙ্গলবার (সেপ্টেম্বর ০৬) নিজ কার‌্যালয়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলছিলেন মহপরিচালক।

সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে পাসপোর্ট সেবা পৌঁছে দিতে নেওয়া সিদ্ধান্তের পাশাপাশি নানা পরিকল্পনার কথাও শোনান তিনি।

মাসুদ রেজওয়ান বলেন, পাসপোর্ট পেতে সাধারণ মানুষকে যাতে কোন ধরনের ভোগান্তি বা হয়রানিতে না পড়তে হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ই-পাসপোর্টধারীদের ব্যাপারে আরেকটু বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমানবন্দরে এই পাসপোর্টধারীদের জন্য থাকবে আলাদা ই-গেট। যা বিদেশগামী কিংবা ফেরত আসাদের ভোগান্তি আরো অনেকাংশে কমিয়ে দেবে।

এরইমধ্যে ই-পাসপোর্ট চালুর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেয়েছে জানিয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, শিগগির টেন্ডার হবে। এরপরেই ই-পাসপোর্ট কার‌্যক্রম শুরু হতে বেশি সময় লাগবে না।

অপর প্রশ্নের জবাবে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের এমআরপি দেওয়ার কাজ সুসম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন,  এ পর‌্যন্ত এক কোটি ৫০ লাখ এমআরপি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভিসা দেওয়া হয়েছে চার লাখেরও বেশি।

প্রবাসীদের হাতে দ্রুত সময়ে পাসপোর্ট পৌঁছে দিতে আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

 

এ সম্পর্কে মাসুদ রেজওয়ান বলেন, দীর্ঘ সময়েও পাসপোর্ট পাওয়া যায় না বলে প্রবাসীদের অভিযোগ শেষ হতে যাচ্ছে। এখন থেকে তিন দিনের মধ্যে পৃথিবীর যেকোন দেশে পাসপোর্ট পৌঁছে দেওয়া হবে। এ বিষয়ক টেন্ডার যাচাই বাছাইয়ের কাজ চলছে।

আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস ফেডারেল এক্সপ্রেস কাজটি পেতে যাচ্ছে এমন ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, তবে এক্ষেত্রে পাসপোর্ট পেতে প্রবাসীদের সামান্য কিছু খরচ বেশি হতে পারে।

কত বেশি হতে পারে জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, সেটি এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।

অতিরিক্ত কিছু খরচের বিনিময়ে হলেও দ্রুত পাসপোর্ট পেতে প্রবাসীরা আগ্রহী হবেন বলেই মনে করছেন তিনি।

গত বছরের শেষ দিকে মহাপরিচালকের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রেজওয়ানের নেওয়া নানা ‍উদ্যোগে অনেকটাই বদলে গেছে পাসপোর্ট অফিসগুলোর চিত্র।

তিনি বলেন, সাধারণ মানুষদের সেবা দেওয়ার জন্য সকল আঞ্চলিক পাসপোর্ট কর্মকর্তাদের কাউন্টারে বসে পাসপোর্ট আবেদন জমা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কোন ব্যক্তি পাসপোর্ট অফিস থেকে সেবা না নিয়ে ফেরত যাওয়ার আগে অবশ্যই আঞ্চলিক কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে যাবেন। এতে করে ওই ব্যক্তি যেমন দালালের খপ্পর থেকে বাঁচবেন, তেমনি কি কারণে তাকে সেবা দেওয়া যায়নি সেটাও ওই কর্মকর্তা জানতে ও জানাতে পারবেন।

এছাড়া সাধারণ মানুষের অযথা হয়রানি বন্ধ করতে অযাচিত নিয়মাবলী বাদ দেওয়ার পক্ষেও কাজ করে যাচ্ছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান।

এ বিষয়ে তিনি সত্যায়িত করতে হয়রানির শিকার হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, পাসপোর্ট একজন ব্যক্তি নিজে হাজির হয়ে ফিঙ্গার প্রিন্টস ও ছবি তোলেন। তার প্রয়োজনীয় কাগজ একজন গেজেটেড অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত করার বিধান আছে। কিন্তু আমরা জেনেছি একজন দালাল বিভিন্ন কর্মকর্তার নামে সিল বানিয়ে ব্যাগে নিয়ে পাসপোর্ট অফিসের সামনে ঘোরাঘুরি করে। সে যাকে চেনেও না, অর্থের বিনিময়ে তাকে অন্য একজন গেজেটেড অফিসারের নামে সত্যায়িত করে দিচ্ছে এই দালালরা। আমি চাই গ্রাহকদের এই সত্যায়িত করার ঝামেলা মুক্ত করতে।

এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন বলে জানান মহাপরিচালক।

এছাড়া পাসপোর্ট আবেদনের ফরম পূরণ আরো সহজ করতেও সুপারিশ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

মাসুদ রেজওয়ান বলেন, পাসপোর্ট আবেদন ফরমটি অত্যন্ত জটিল হহওয়ায় একজন সাধারণ মানুষ ফরম পূরণ করার প্রক্রিয়া থেকেই হয়রাণির মধ্যে পড়েন। এজন্য ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এটা ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় অনেক বড় একটি ধাপ বলে আমি মনে করি।

 

এদিকে পাসপোর্টের মেয়াদ পাঁচ বছরের পরিবর্তে বাড়িয়ে ১০ বছর করার কার‌্যক্রমও চলছে বলে জানান তিনি। এর সঙ্গে বাড়ানো হবে পাসপোর্টের পাতাও। তবে ভিন্ন ফি’র নিয়ম রেখে ৪৮ পাতা ও ৬৪ পাতা পাসপোর্ট বিতরণ করা হবে। যাতে করে অধিকহারে ভ্রমণ করেন এমন ব্যক্তিরা বেশি পাতার পাসপোর্ট ও কম ভ্রমণকারীরা কম পাতার পাসপোর্ট সংগ্রহ করার সুযোগ পান।

এছাড়া পাসেপোর্ট করতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে যে অযথা হয়রানি হয় তা ঠেকাতেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা কিংবা কতিপয় অপরাধীদের পাসপোর্ট নেওয়া ঠেকাতে পুলিশ ভেরিফিকেশন এখনই বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে যাদের স্মার্ট কার্ড থাকবে তারা পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই পাসপোর্ট পাবেন।  সুত্র বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

 

Related posts