শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম। ৬ জুন ২০১৬
নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে উচ্চ আদালত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেও মৌচাক মার্কেট বণিক সমিতি আপতত দোকানপাট খোলা রাখার সিদ্ধান্তই রেখেছে।
মঙ্গলবার আদালতের নির্দেশনা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও মার্কেটের পুরোভাগই খোলা ছিল। বণিক সমিতি উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে চ্যালেঞ্জ করে আপিল করার সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে।
সমিতি মনে করছে, মার্কেট নিয়ে বড় ধরণের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। একটি পক্ষের সুবিধার জন্যই ভবন বন্ধ রাখার এ ষড়যন্ত্র।
মার্কেটের নীচতলায় জনপ্রিয় জুয়েলার্সের দোকান। দোকানের সেলসম্যান রণি বলেন, আমরা এ ব্যাপারে এখনও আনুষ্ঠানিক খবর পাইনি। বণিক সমিতি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে গণমাধ্যমের খবরে ইতোমধ্যেই ব্যবসায় প্রভাব পড়ছে। বিকেল থেকে মার্কেটে অনেক ক্রেতাই আসতে চাননি। রোজার মধ্যে এমন সিদ্ধান্তে সকলের মাথায় হাত পড়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় মৌচাক বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ-ই-আজম। তিনি বলেন, আমাদের কাছে ব্যবসার একটিই মৌসুম। রোজাকে কেন্দ্র করেই স্বপ্ন দেখা। আর আজ আদালতের এমন সিদ্ধন্ত! চোখে সরষে ফুল দেখছি। অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল।
শাহ-ই-আজম বলেন, ভবনের সংস্কারের তাগিদ দেয়া হয়েছিল বুয়েটের পরিদর্শন দলের পক্ষ থেকে। আমরা সেইভাবেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। রোববারও আমরা মিটিং করেছি। অথচ আজ বন্ধের নির্দেশনা এল।
তিনি বলেন, আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করব। আশা করছি, আপিল বিভাগ শত শত ব্যবসায়ীর আবেগ বুঝতে পারবেন।
২০১৪ সালের ৭মে রাজধানী উন্নয়ন কতৃপক্ষ (রাজউক) মৌচাক মার্কেটের ভবন মালিককে চিঠি দেন।
এতে বলা হয়, ইমারতটি বহু পুরাতন ও বহুল ব্যবহৃত। প্রত্যহ হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। বর্তমানে ইমারতটি জীর্ণ ও দৃশ্যত ঝুকিপূর্ণ প্রতীয়মান হওয়ায় বুয়েট পুরকৌশল বিভাগ বা বিআরটিসি কর্তৃক পরীক্ষা-নীরিক্ষা পূর্বক কাঠামোগত উপযুক্ততার সনদ গ্রহণ করে চাওয়া তথ্যদি এই দফতরে (রাজউক) দাখিল করার জন্য অনুরোধ করা হলো। সেইসঙ্গে ভবনটির কাঠামোগত উপযুক্ততা নিশ্চিত হয়ে ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হলো।
এরই ধারাবাহিকতায় বুয়েটের দেয়া সুপারিশ রাজউকে জমা পড়ে। এর প্রেক্ষিতে রাজউক গত ২ মে ভবন মালিককে আরেকটি চিঠি দেয়।
চিঠিতে বলা হয়, বুয়েট প্রণীত কাঠামোগত মূল্যায়ন প্রতিবেদনের পরামর্শ ও কর্তৃপক্ষের ওই নির্দেশনা স্বত্ত্বেও কাঠামোগত ঝুঁকি হ্রাসে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে দায়িত্বহীনভাবে মার্কেট ব্যবহার অব্যাহত রেখেছেন, যা জীবন ও সম্পদের জন্য ঝুকিপূর্ণ এবং ইমারত নির্মাণ আইন-১৯৫২ এর সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন।
এ অবস্থায় মার্কেটটির ব্যবহার বন্ধ করে বুয়েট প্রণীত নকশা মোতাবেক বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে কাজ অবিলম্বে শুরু করার জন্য পুনরায় নির্দেশ দেয়া হলো। কাঠামোগত ঝুকিপূর্ণ ভবনটি ব্যবহারের দরুণ যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে একমাত্র আপনিই (মালিক) এবং আপনার ব্যবস্থাপনা দায়ী থাকবে এবং ইমারত নির্মাণ আইন ১৯৫২ অনুযায়ী যথাযথ আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এটি চূড়ান্ত নোটিশ বলে গণ্য হবে।
এই নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জেড কে লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ভবন মালিক আশরাফ কামাল পাশা গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে রিট আবেদনটি করেন। রিটের ওপর রোববার ও সোমবার শুনানি নিয়ে আদালত রুলসহ ওই আদেশ দেন।