শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ১৬ অক্টোবর ২০১৬
নির্বাচন কমিশন (ইসি) জাতীয় পরিচয়পত্র সেবার কাজ জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে স্থানান্তর করেছে গত জানুয়ারিতে। সাধারণ নাগরিকদের আগারগাঁওয়ের ইসলামী ফাউন্ডেশন ভবনের অনুবিভাগ থেকে বলা হচ্ছে এখানে জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুল সংশোধন করা হয় না। ইসির সব কর্মকর্তা- কর্মচারীর মুখে একই ধরনের বক্তব্য শুনা গেছে।
রোববার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ইসির কর্মকর্তারা সরাসরি জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুল সংশোধনের কোন কাজ না করলেও দালালের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে পাওয়া যাচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্র। তারা কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ রেখে জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুল সংশোধন করছেন ও হাড়ানো কার্ড দেয়ার কাজ নিচ্ছেন। তবে এ ক্ষেত্রে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।
মিরপুরের ভোটার আতিক বিডি টুয়েন্টি ফোর লাইভ ডটকমকে বলেন, আমার জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার জন্য কয়েকদিন যাবৎ ঘুরছি, কিন্তু এখনও ফরম জমা দিতে পারিনি। নির্বাচন কমিশনের কর্মচারিরা বলছে এখানে কোন কাজ হয় না, থানা অফিসে যোগাযোগ করুণ। কিন্তু সেখানে গিয়ে কোন লাভ হয়নি। দালালরা নাম সংশোধনের জন্য ৪ হাজার টাকা চাচ্ছে। তারা বলছেন ইসলামী ফাউন্ডেশন ভবন থেকে করে দেওয়া হবে।
পরিচয় গোপন রেখে আফসার ও নইম নামে দুজন দালালের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
আফসার বললেন, নিজে করতে গেলে কবে পাবেন ঠিক নেই। তবে এক হাজার টাকা দিলে হারানো কার্ড সাত দিনের মধ্যে তুলে দেবেন। আর নইম বললেন, আপনারা গেলে বলবে সংশোধন হয় না, কিন্তু আমাদের লোক আছে আমরা করে দিতে পারব। কার্ডে কম (বয়স) দেখাতে চাইলে ৫ হাজার টাকা লাগবে।
নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন বলেন, আমরা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের কাজ স্থান্তর করেছি। এখানে শুধু কমিশনের কর্মকর্তা -কর্মচারীদের জন্য কিছু কাজ করা হয়। দালাল ধরতে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলে।
এদিকে সাধারণ নাগরিকদের স্মার্ট কার্ড দেয়ার জন্য ১০৫ নম্বরের হেল্প ডেস্ক খুলেছে নির্বাচন কমিশন। এ হেল্প ডেস্কে সেবা নিতে গিয়ে উল্টো হয়রানীর শিকার হচ্ছেন সাধারণ ভোটাররা।
কমিশনের ঘোষিত ১০৫ হেল্প ডেস্কে ডায়াল করে মিলছে না স্মার্ট কার্ড তথা জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কোনো তথ্য। ওয়েবসাইটও ঠিক তথ্য দিতে পারছে না বলেই ভোটারদের অনেকে দাবি করেছেন। অধিকাংশ সময় হেল্প ডেস্কের নাম্বারটি বন্ধ অথবা ব্যস্ত দেখা যাচ্ছে। দুই এক সময় ফোন রিসিভ হলেও সরাসরি কোন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে না।
ইসি দাবি করছে, যে কোনো অপারেটর থেকে ১০৫ নম্বরে ফোন দিলে স্মার্ট কার্ডের প্রয়োজনীয় তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানানো হবে। আর এনআইডি’ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গেও কথা বলা যাবে। সেবা গ্রহীতা এনআইডি নম্বরসহ অন্যান্য তথ্য দিয়ে তার স্মার্ট কার্ডটি কবে কোথায় দেওয়া হবে সে তথ্যও জানতে পারবেন।
এছাড়া স্মার্ট কার্ড সংশোধন, স্থানান্তর, ঠিকানা পরিবর্তনসহ হারানো কার্ড উত্তোলন, কোন আবেদনের জন্য ব্যাংকে কত টাকা ফি জমা দিতে হবে প্রভৃতি তথ্যও ১০৫ নম্বরে ফোন করে জানানোর কথা রয়েছে।
ইসলামী ফাউন্ডেশনের ৮ তলায় নির্বাচন কমিশনের হেল্প ডেস্কে গিয়ে দেখা যায় ১২ টি টেলিফোনের বিপরীতে একজন অপারেটর ও একজন আনসার বসে আছেন। এসময় ফোন বাজার শব্দ শোনা গেলেও তাদের কোন ফোন রিসিভ করতে দেখা যায়নি।
হেল্প ডেস্কে অবস্থানকারী অপারেটর সুমনের কাছে ফোন রিসিভ না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এখানে সব সময় ফোন আসে কত ফোন রিসিভ করব বলেন, মাথা কাজ করে না। তারপরও আমরা অনেক ফোন রিসিভ করি। সহকর্মীরা দুপুরের লাঞ্চে গেছে আসলে ফোন রিসিভ করা হবে।
খোজ নিয়ে জানা যায়, ইসির হেল্প ডেস্কে প্রতিদিন ৬ ঘন্টা করে দুই সিফটে ১২ ঘন্টা খুলে রাখা হয়। দুই সিফটে ১২ ঘণ্টা করে মোট ২৪ জন অপারেটর সেবা দেয়ার জন্য নিয়োজিত থাকেন। তাদের কাজ গ্রাহকদের ফোন রিসিভ করে সরাসরি সঠিক তথ্য দিয়ে সাহাজ্য করা।