‘তৃণমূল নেতা-কর্মীরা আ.লীগকে ধরে রেখেছে’

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম ।  ২৩ অক্টোবর  ২০১৬

‘তৃণমূল নেতা-কর্মীরা আ.লীগকে ধরে রেখেছে’

‘তৃণমূল নেতা-কর্মীরা আ.লীগকে ধরে রেখেছে’

‘তৃণমূল নেতা-কর্মীদের আত্মত্যাগই আওয়ামী লীগকে ধরে রেখেছে’ বলেছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ।শনিবার দুপুরে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২০তম জাতীয় সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বক্তব্যের শুরুতে উপস্থিত কাউন্সিলর, ডেলিগেট, দেশি-বিদেশি  আমন্ত্রিত অতিথিদের অভিবাদন জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহতদের স্মরণ করেন শেখ হাসিনা। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে নিহত সব শহীদ ও জাতীয় চার নেতাকে স্মরণ করেন তিনি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠানকালীন সময় তৃণমূলের সকল নেতার অবদানকে স্মরণ করেন তিনি।

বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধন : সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এভাবেই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে চাই। প্রবৃদ্ধি আমরা ৭ দশমিক ১ ভাগে উন্নীত করেছি। কিন্তু এখানেই আমি থেমে থাকতে চাই না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশেকে আমরা বিশ্বের মধ্যে একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শান্তিপূর্ণ দেশ। সে কারণেই ঘোষণা দিয়েছি জিরো টলারেন্স টু টেররিজম। টেররিজমকে আমরা কখনো প্রশ্রয় দেব না। এর মধ্যে আমরা সবরকম ব্যবস্থা নিয়েছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের মাটিতে কেউ কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে পারবে না। প্রতিবেশী দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাবার জন্য আমাদের ভূখণ্ড আমরা কাউকে ব্যবহার করতে দেব না। এটা আমাদের সিদ্ধান্ত।’

‘দক্ষিণ এশিয়া হবে প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধন। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ একটি প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের সেতু বন্ধনের দেশ হিসেবে হবে শান্তিপূর্ণ দেশ। তাই আমরা আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।’

বাংলাদেশে দারিদ্র্য বলে কিছু থাকবে না : ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে নেতা-কর্মীসহ সকল নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের যত নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের  নেতা-কর্মী এবং সহযোগী নেতা-কর্মীদের প্রতি আমার আহ্বান হলো, বাংলাদেশকে আমরা দারিদ্র্যমুক্ত করতে চাই। আপনারা যারা আজকে বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন, আপনার এলাকায় গিয়ে তালিকা বানান, কতজন দারিদ্র মানুষ আছে, গৃহহারা মানুষ আছে, কোন মানুষের ঘর বাড়ি নাই, ঠিকানা নাই। তাদের জন্য আমরা বিনামূল্যে ঘর তৈরি করে দেব। তারা যাতে বেঁচে থাকতে পারে, আমরা তার ব্যবস্থা করে দেব। কারণ তারা আমাদের নাগরিক। আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন। কাজেই জনগণের কল্যাণ করাই আমাদের দায়িত্ব। আমরা যদি এই কাজ সঠিকভাবে করতে পারি, ইনশা আল্লাহ এই বাংলাদেশে কোনো দারিদ্র্য থাকবে না। দারিদ্র্যের হার ৯৭ ভাগ ছিল। তা ২২ দশমিক ৪ ভাগে নামিয়ে এনেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি আমরা ৭ ভাগ থেকে ৮-১০ ভাগের ওপর নিয়ে যাব। এখন প্রত্যেকের মাথাপিছু আয় এক হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলার। এই আয় এমনভাবে বৃদ্ধি করব যাতে দেশের মানুষ আর কখনো দরিদ্র না হয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোটায় নামাব এবং ক্ষুধামুক্ত সমাজ গঠন করব। প্রতিটি মানুষ শিক্ষিত হবে।’

শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ও লক্ষ্যগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের কোনো ঘর অন্ধকার থাকবে না। প্রতি ঘরে আমরা আলো জ্বালাব। সমগ্র বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের জন্য সুনির্দিষ্ট স্থানে আমরা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলে কর্মসংস্থানের প্রসার ঘটাব। কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রসার ঘটবে। রাজধানীর সঙ্গে একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা নিশ্চিত করব। আর বিমানপথকে আমরা এমনভাবে উন্নত করব যাতে সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগব্যবস্থা চালু হয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাচ্যের মানুষজন পাশ্চাত্যে যাবে। পাশ্চাত্যের মানুষ প্রাচ্যে যাবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশই হবে তাদের প্রথম হাব। বাংলাদেশই হবে সেতুবন্ধন। সেভাবেই আমরা আমাদের যোগাযোগব্যবস্থাকে উন্নত করব।’

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূলনীতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এই নীতিতেই বিশ্বাস করি। আমরা এই নীতির আলোকে দ্বিপাক্ষিক আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। যার কিছু দৃষ্টান্ত এখানে পেয়েছেন। বন্ধুপ্রতীম দেশের প্রতিনিধিরা এখানে এসেছেন, বক্তব্য দিয়েছেন।’

আমাদের সিদ্ধান্ত- সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের স্থান বাংলাদেশে হবে না। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ দেশে আমরা প্রতিষ্ঠিত করব। স্বাধীনতার সুফল দেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌছে দেব। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আবার আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলব। এই বাংলাদেশে হবে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ। যে দেশের স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন। আমরা তা প্রতিষ্ঠিত করব,’ প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের আগমন এই সম্মেলনকে সম্মানিত করেছে। আমাদের উজ্জীবিত করেছে। আরো দৃঢ়চেতা করেছে বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে। কারণ আমাদের বন্ধুরা আজকে আমাদের পাশে আছে।’

পাশাপাশি সম্মেলনে সারা দেশ থেকে আগত কাউন্সিলর, প্রতিনিধি ও আমন্ত্রিত অতিথিসহ যে সকল দেশের রাষ্ট্রপ্রধান-সরকারপ্রধান এই সম্মেলনে বাণী পাঠিয়েছেন তাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আপনাদের আগমন সম্মেলনকে সাফল্যমণ্ডিত করেছে। আমাদের আত্মবিশ্বাস আরো বৃদ্ধি করেছে। আওয়ামী লীগকে আরো সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করবে আপনাদের এই আগমন।’

 

Related posts