সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭’এর খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম ।  ২৭  মার্চ  ২০১৭

মন্ত্রিসভায় সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭’এর খসড়া অনুমোদন

মন্ত্রিসভায়

গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে শাস্তির বিধান রেখে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭ এর খসড়ায় আজ নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এতে সংশ্লিষ্ট আইন অমান্যে অন্যান্য সাজাও বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বাংলাদেশ সচিবালয়ে আজ অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।

বৈঠকে মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট প্রতিমন্ত্রীগণ অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট সচিবগণ।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম ব্রিফকালে সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের নির্দেশে এ সম্পর্কিত পূর্ববর্তী অধ্যাদেশের স্থলে এ নতুন আইনের খসড়ায় অনুমোদন দেয়া হয়।

তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাতে পরিণত হয়েছে। এজন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে খসড়ায় বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এতে গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে ১ মাস কারাদন্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং বেপরোয়া গাড়ি চালানোর দুর্ঘটনায় ৩ বছর জেল বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডই হতে পারে।

প্রস্তাবিত আইনে সাধারণ চালকের জন্য বয়স ১৮ বছর ও পেশাদার চালকের বয়স ২১ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন আইনে চালকের জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণী এবং হেলপার বা সহযোগীর জন্য ৫ম শ্রেণীর প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ আইনে লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর মতো অপরাধের ক্ষেত্রে ৬ মাস কারাদন্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে পরোয়ানা ছাড়াই অভিযুক্তকে গ্রেফতারের বিধান রয়েছে। তবে ভুয়া লাইসেন্সে গাড়ি চালানোর সাজা কঠোর করা হয়েছে। এতে ভুয়া লাইসেন্সধারী চালকের ২ বছর কারাদন্ড বা ৩ লাখ টাকা জরিমান বা উভয় দন্ডের প্রস্তাব রয়েছে।

প্রস্তাবে গাড়ির কন্ডাকটরদের জন্য লাইসেন্সের বিধান রয়েছে। এ বিধান লঙ্ঘিত হলে ১ মাস জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডই হতে পারে।

ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়া গাড়ি চালালে ১ মাস জেল বা ১ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড হতে পারে।

সচিব বলেন, দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে এবং তা নরহত্যার পর্যায়ে হলে সেক্ষেত্রে দন্ডবিধির ৩০২ ধারা প্রযোজ্য হবে। তবে এই হত্যাকান্ড খুনের পর্যায়ে না হলে ৩০৪ ধারা প্রযোজ্য হবে।

এছাড়া ওজনসীমা অতিক্রম করলে গাড়ির মালিক ও চালকের জন্য ৩ বছর জেল বা ৩ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডই হতে পারে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চালকদের সুপরিচালনার জন্য পয়েন্টভিত্তিক ব্যবস্থা চালু হবে। এতে মোট ১২ পয়েন্ট থাকবে। সংশ্লিষ্ট আইন লঙ্ঘনের অপরাধে এই পয়েন্ট কাটা যাবে। কোন চালকের সব পয়েন্ট কাটা গেলে তার লাইসেন্স বাতিল হবে।

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইনে দ্বিবিধ নির্দেশনা রয়েছে। এর প্রথমাংশে ১৪টি এবং দ্বিতীয়াংশে ১১টি নির্দেশনা রয়েছে। এরমধ্যে প্রথমাংশের নির্দেশনা অমান্যে চালককে ৩ মাসের কারাদন্ড বা ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড এবং দ্বিতীয়াংশের নির্দেশনা লঙ্ঘনের জন্য ১ মাস কারাদন্ড বা ৫ হাজার টাকা জারিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে।

আলম বলেন, উচ্চতর আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে সামরিক শাসনামলে জারিকৃত সকল অধ্যাদেশ আইনে পরিণত করার ইতোপূর্বেকার মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্তমান অধ্যাদেশসমূহ বাংলায় অনুবাদ করে ‘বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন-২০১৭’ এর খসড়াও মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘দ্যা ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ওর্ডিনেন্স ১৯৮৪’ বাংলায় অনুবাদ করে এবং এর সঙ্গে ৪টি নতুন ধারা যুক্ত করে নতুন আইন প্রণীত হচ্ছে। তিনি বলেন, বিদ্যমান অধ্যাদেশে সংযুক্ত নতুন ৪টি অধ্যায় হচ্ছে ৮, ২১, ২২ ও ২৩।

আলম বলেন, বর্তমান অধ্যাদেশের বোর্ড অব গভর্ন্সেসের কার্যক্রম সজ্ঞায়িত হয়নি। ‘কিন্তু বোর্ডের কার্যক্রম সংজ্ঞায়িত করে প্রস্তাবিত আইনে ধারা ৮ সংযুক্ত করা হয়েছে।’

প্রস্তাবিত আইনের সংযুক্ত ধারা ২১ অনুযায়ী ব্যক্তিপর্যায়ে অথবা কোন সংস্থায় পরামর্শ সেবা দিয়ে ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানিরা বোর্ড নির্ধারিত হারে ফি নিতে পারবেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘যে সব বিজ্ঞানী বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, মৎস্য শিল্প স্থাপন ও অনুসন্ধান কাজে পরামর্শ সেবা দেবেন তারা ফি’র ৩০ শতাংশ নিতে পারবেন এবং বাকী ৭০ শতাংশ ওই ইনস্টিটিউটকে প্রদান করবেন।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরো বলেন, বিদ্যমান আইনে কিছু নতুন পরিবর্তন এনে মন্ত্রিসভা আজ নীতিগতভাবে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট (সংশোধন) ২০১৭’ এর খসড়াও অনুমোদন দিয়েছে।

তিনি বলেন, এই ইনস্টিটিউটের প্রধানের পদ হচ্ছে মহাপরিচালক, আর ইউনেক্সের প্রধানও মহাপরিচালক।

কিন্তু ইউনেক্সের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী অথবা অনুমোদনের শর্ত মোতাবেক এই ইনস্টিটিউটের প্রধানের পদ হবে পরিচালক।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই সংশোধনী আনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মহাপরিচালক’ শব্দের বদলে ‘পরিচালক’ শব্দটি সংযোজিত হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ইউনেক্সের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ইনস্টিটিউটের ২২ সদস্যের গভর্নিং বডির স্থলে হবে ৬ সদস্যের গভার্নিং বডি। তাছাড়া ইনস্টিটিউটের দৈনন্দিন কার্যক্রম দেখভালের জন্য বড় আকারের একটা নির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে।

 

 

Related posts