শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ১২ অক্টোবর ২০১৬
বিশ্বে এখন মৃত্যুর দ্বিতীয় সেরা কারণ হচ্ছে স্ট্রোক। অতএব স্ট্রোক হওয়ার আগের সঙ্কেতগুলোকে চেনা আমাদের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে। দুই ধরনের প্রাথমিক স্ট্রোক রয়েছে। একটি ইসক্যায়িমিক : এই স্ট্রোকের অর্থ বন্ধ হয়ে যাওয়া রক্তের আধারগুলো (ব্লকড ব্লাড ভেসেলগুলো) মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ কমিয়ে দেয়া। অপরটি হেয়িমরহেজিক : এই স্ট্রোকের অর্থ ছিদ্র হয়ে যাওয়া ব্লাড ভেসেল থেকে রক্ত চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে মস্তিষ্কে। উভয় ধরনের স্ট্রোকের লক্ষণ একই হতে পারে কিংবা হতে পারে ভিন্ন। আর তা নির্ভর করবে মস্তিষ্কের কোন অংশে এর প্রভাব পড়েছে। স্ট্রোক হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স ডাকা অপরিহার্য।
১. যদি দেখেন আপনি পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছেন ও চোখে ডাবল দেখছেন
এ সময় দৃষ্টিসমস্যা দেখা দেয়, যেমন চোখে ডাবল দেখা, চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠা কিংবা এক চোখে দেখতে না পাওয়া। এসব লক্ষণ দেখা দিলে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা জানিয়ে দেয়। ‘বেশি সময় ধরে পড়া কিংবা পরিশ্রান্ত হয়ে পড়লে একটি বস্তুকে দুইটি দেখা খুবই স্বাভাবিক এক ব্যাপার’ এ অভিমত নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের স্ট্রোক বিশেষজ্ঞ ড. ক্যারিলিন ব্রুকিংটনের। ব্লাড ভেসেল ব্লক হয়ে গেলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যেতে পারে। এর ফলে দৃষ্টিসমস্যা দেখা দিতে পারে, যার সাথে স্ট্রোকের অন্যান্য লক্ষণের সম্পর্ক নাও থাকতে পারে।
২. যখন দেখবেন আপনার বাহুগুলো অসাড় হয়ে পড়েছে
সামান্য ঘুমের পর ঘুম থেকে জেগে যখন দেখলেন আপনার বাহুগুলোতে কোনো বল নেই, যেন অসাড় পড়ে আছে, তখন সহজেই ধরে নেয়া যায়, স্নায়ুগলো সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়ার ফলে এমনটি হয়েছে। মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজি স্পেশালিস্ট প্রফেসর রালফ সাক্কো বলেন,‘হঠাৎ করে আপনার বাহু যদি নিস্তেজ কিংবা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সামান্য কয় মিনিটের মধ্যে যদি তা না সারে, তবে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন’। যে ধমনি চলে গেছে আপনার মেরুদণ্ড দিয়ে মস্তিষ্ক বরাবর, সে ধমনি দিয়ে কম পরিমাণে রক্তপ্রবাহ হলে তবে শরীরের পাশে দুর্বলতা ও অসারতা দেখা দেয়।
৩. হঠাৎ করে বোধজ্ঞান বা চেতনাবোধে ঘাটতি দেখা দেয়া স্ট্রোকের একটি সাধারণ সঙ্কেত
ব্রোকিংটন বলেন, ‘হতে পারে স্বল্প সময়ের জন্য একটি শব্দ আপনি মনে করতে না পারেন, কিন্তু দীর্ঘসময় মনে করতে না পারা ভালো লক্ষণ নয়।’
৪. আপনি শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে পারছেন না
আপনার ব্যালেন্স প্রবলেম হচ্ছে মনে হতে পারে তা মদপান করার কারণে হয়েছে। কারণ আপনি গতকাল নেশা পান করেছিলেন। ব্রোকিংটন বলেন, ‘অনেকে মনে করেন, মদপানের ফলে মানুষের এ ধরনের সমস্যা হয়। তবে একটা কথা মনে রাখবেন, এসব সমস্যার চিকিৎসা নিয়ে বিলম্ব করবেন না। শুধু নেশাপানকেই এ জন্য দায়ী করা যাবে না। হতে পারে কোনো কারণে, আপনার মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ কমে গিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’ এমনকি সামান্য সময় আগে মদপানের পরও যদি আপনার ব্যালেন্স প্রবলেম দেখা দেয়, আপনি সোজা হয়ে হাঁটতে পারছেন না, কিংবা হঠাৎ করে তন্দ্রাভাব নেমে আসে, তবে দেরি না করেই অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন।
৫.কথা বলতে এক শব্দ আরেক শব্দের সাথে জড়িয়ে গিয়ে কথা অস্পষ্ট হয়ে পড়া স্ট্রোকের আরেক সঙ্কেত
এ ধরনের কথা বলাকে ইংরেজিতে বলা হয় স্লারড স্পিচ। সাক্কো বলেন, ‘কখনো কখনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এই স্লারড স্পিচের কারণ হতে পারে।’ তবে সবসময় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় তা হয় না। অন্য কারণেও হতে পারে। তবে এটি স্ট্রোকের একটি লক্ষণও বটে। তাই এমন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
০৬. আধকপালে মাথাব্যথা কখনো কখনো স্ট্রোকের সঙ্কেত হতে পারে
আধকপালে মাথাব্যথার ছদ্মাবরণে স্ট্রোক দেখা দিতে পারে এ অভিমত সাক্কোর। তিনি বলেন, ‘আমি লোকদের বলি, এটিকে স্ট্রোকের সঙ্কেত হিসেবে বিবেচনা করুন। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের সাহায্য নিন। জেনে নিন এটি স্ট্রোক কি না।’