শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬
চলছে শীতকালীন অবকাশ। আবার ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শুক্র-শনিবারের সপ্তাহিক ছুটি। টানা তিনদিনের ছুটিকে ঘিরে পর্যটন শহর কক্সবাজার সাগর সৈকতে বসছে লাখো পর্যটকের মিলনমেলা।
বড়দিন উদযাপনের পর পরই আসছে ইংরেজি বর্ষকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ। তাই লাখো পর্যটকের ঢেউ থাকবে থার্টি ফাস্ট নাইট পর্যন্ত। ফলে বছরের শেষ ও শুরু মিলিয়ে ৮-৯ দিন লাখো পর্যটকে টইটুম্বুর থাকবে কক্সবাজারের বালিয়াড়ি। পর্যটন এলাকার ছোট-বড় অর্ধসহস্রাধিক আবাসিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজের কক্ষ অগ্রিম বুকিং বিবেচনায় নিয়ে পর্যটন ব্যবসায়ীরা এমন ধারণা করছেন।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি ওমর সোলতান জানান, শহরের আবাসিক হোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজ ও সরকারী রেস্ট হাউসে প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার মানুষের রাত যাপনের সুবিধা রয়েছে। পুরো ডিসেম্বর মাস জুড়েই আবাসিক হোটেলগুলোতে শতকরা ৭০ ভাগ কক্ষ ভরপুর ছিল। আর সপ্তাহিক ছুটি ও বড়দিন মিলে টানা তিনদিনের জন্য প্রায় সব হোটেলের কক্ষই অগ্রিম বুকিং হয় আরও কয়েকমাস আগেই। এ অবস্থায় বছরের শেষ দিনগুলোতে লাখো পর্যটকে মুখর থাকবে কক্সবাজার। থাকবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশি পর্যটকও।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি এম এন করিম বলেন, ২৩-২৫ ডিসেম্বরের ছুটিকে মাথায় নিয়ে একটি প্রসিদ্ধ ওষুধ কোম্পানি তাদের বার্ষিক কনফারেন্সের জন্য গত বছরই এ তিনদিনকে ঠিক করে। তারা হোটেল-মোটেল জোনের একাধিক তারকা হোটেলসহ বেশ কয়েকটি হোটেল-গেস্ট হাউস অগ্রিম বুকিং দিয়ে রেখেছিল। তাদের মতো করে ভ্রমণপ্রিয় অনেক পরিবারও আগাম কক্ষ বুকিং দেয়। ফলে কোন হোটেলে কক্ষ খালি নেই বলে জানা গেছে। বেশি টাকার অপার পেলেও নতুন করে কোন কক্ষ ভাড়া দেয়া যাচ্ছে না।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’র জ্যেষ্ঠ সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, কাজের ভারে ঝিমিয়ে পড়া মানুষ একটু প্রশান্তির খোঁজে প্রতি বছর শীত মৌসুমে ভিড় করে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে। এবছরও এর ব্যতিক্রম নয়।
ট্যুরস অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) সদস্য দিগন্ত টুরিজমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) ইয়ার মুহাম্মদ বলেন, শীতকালীন অবকাশ, শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ এবং চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে সরকারি ছুটি থাকার কারণে পর্যটকে টুইটুম্বুর হতে যাচ্ছে কক্সবাজার।
কক্সবাজারের তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের পরিচালক আবদুল কাদের মুন্সী জানান, একটি কোম্পানি বার্ষিক কনফারেন্স’র জন্য গত বছর থেকে হোটেলের ৭০ শতাংশ রুম বুকিং দিয়ে রেখেছিল। বাকি রুম গুলো ইন্ডিভিজ্যুয়াল বুকিং হয়েছে। তাই টানা তিনটা দিন ব্যবসাটা ভালো হতে পারে।
সৈতক পারের তারকা হোটেল কক্স টু ডে’র রুম ডিভিশন ম্যানেজার অংছা চিং চাক জানান, ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের হোটেলে কোন কক্ষ খালি নেই। প্রায় একই অবস্থা কলাতলির তারকা হোটেল সী-গাল, সাইমন, বেস্ট ওয়েস্টার্ন হেরিটেজ, লং বিচসহ মাঝারি মানের হোটেলগুলোর।
নিয়মানুসারে মৌসুমের শুরুতেই পর্যটক টানতে বিভিন্ন পর্যটন স্পট নিজ উদ্যোগে সাজান ব্যবসায়ীরা। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত, ইনানি, সেন্টমার্টিন, হিমছড়ি, সোনাদিয়া, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, গুদুম গুহাসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলোও নতুন করে সাজানো হয়েছে। এবার পর্যটকদের জন্য বাড়তি আনন্দ যোগ করেছে কলাতলীতে চলমান আন্তর্জাতিকমানের হস্ত ও কুটির শিল্প বাণিজ্য মেলা।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, ডিসেম্বরের শুরু থেকে প্রবালদ্বীপে পর্যটক আগমন বেড়েছে। শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত এখানে শতাধিক হোটেলের কক্ষ আগাম বুকিং করা রয়েছে।
প্রতিবছরের কোলাহল মাথায় রেখে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নিয়মিত টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এইচ এম রায়হান কাজেমী। তিনি বলেন, আবাসিক হোটেলসমূহ সিসিটিভি ক্যমেরার আওতায় নেয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, পর্যটকদের হয়রানি বন্ধে হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় মূল্য তালিকা টাঙানোর নির্দেশনা দেয়া আছে। এসব তদারকিতে মাঠে রয়েছে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত।