যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে সুন্দরবন-১০ লঞ্চ

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম। ২০  জুন ২০১৬

যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে সুন্দরবন-১০ লঞ্চ

যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে সুন্দরবন-১০ লঞ্চ

এবার সর্বোচ্চ আধুনিক প্রযুক্তি ও সুবিধা নিয়ে  বরিশাল থেকে ঢাকা রুটে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে সুন্দরবন-১০ লঞ্চ।

ঈদকে কেন্দ্র করে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে যাত্রীসেবায় আরো সুবিধা দিতে সর্ববৃহৎ ও সর্বোচ্চ যাত্রীধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বিলাসবহুল এ চারতলা বিশিষ্ট লঞ্চটি চলাচল শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে।

এটি দেশের অভ্যন্তরীণ রুট ও সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির সর্বোচ্চ আধুনিক ও প্রযুক্তিসমৃদ্ধ লঞ্চ। ইতোমধ্যে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। চলছে সাজ-সজ্জার কাজ।

এদিকে, নদীপথে ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকবার চলাচল করেছে সুন্দরবন-১০।

অত্যাধুনিক সুবিধার লঞ্চটিতে প্রথমবারের মতো যুক্ত হচ্ছে লিফট ও সিসিইউ ইউনিট সুবিধা। থাকছে ডুপ্লেক্স কেবিন ও ফুডকোর্টসহ নানান প্রযুক্তির ছোঁয়া।

লঞ্চ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী সাইদুর রহমান রিন্টু  জানান, লঞ্চটির প্রতিটি স্তরে আধুনিকতার ছোয়া দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। পাশাপাশি সবার চেয়ে আলাদা ও রুচিশীল চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটানো হয়েছে এতে।

তিনি জানান, দেশের সর্ববৃহৎ এ লঞ্চটির দৈর্ঘ্য ৩৩২ ফুট ও প্রস্থ ৫২ ফুট। লঞ্চের ডেকের নিচে ১২টি কম্পার্টমেন্ট করা হয়েছে। যাতে লঞ্চের তলার কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে অপর অংশে পানি প্রবেশ করতে না পারে।

লঞ্চের নিচতলার ডেকে প্রশস্ত হাঁটার জায়গা, পর্যাপ্ত টয়লেট, ডেকের যাত্রীদের জন্য ক্যান্টিন রয়েছে। তবে নিচতলায় এলইডি ও সাধারণ লাইটের সংযোজনে আলোকসজ্জায় আনা হয়েছে পরিবর্তন।

নিচতলার সামনের অংশে হৃদরোগীদের জন্য থাকছে এক শয্যাবিশিষ্ট স্বয়ংক্রিয় সিসিইউ মনিটর বেড সম্বলিত সিসিইউ ইউনিট। এখানে অক্সিজেনের পাশাপাশি চিকিৎসা সুবিধাও পাওয়া যাবে। সেইসঙ্গে উপরে-নিচে চলাচলের জন্য রয়েছে লিফট।

লঞ্চের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় রয়েছে প্রথম শ্রেণির শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একক ও ডাবল মিলিয়ে দুই শতাধিক কেবিন। এর বিশেষভাবে নির্মিত সিঁড়ি বেয়ে নিচতলা থেকে সরাসরি দ্বিতীয় বা তৃতীয় তলায় চলে যাওয়া যাবে।

এরআগে বরিশাল-ঢাকা রুটের লঞ্চগুলোতে নিচতলা থেকে দ্বিতীয় ও দ্বিতীয়তলা থেকে তৃতীয়তলায় যাওয়ার আলাদা সিঁড়ির ব্যবস্থা ছিল।

এছাড়াও সুন্দরবন-১০ এ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ৪০টি সোফা বা বিলাসবহুল আসন রয়েছে।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ১২টি কমন বাথরুমের ভিআইপি কেবিন ছাড়াও রয়েছে ৬টি বিশেষ ভিআইপি কেবিন। এর প্রতিটি কক্ষে রয়েছে আলাদা বাথরুম ও বারান্দা। আরো রয়েছে অত্যাধুনিক আরামদায়ক বিছানা, পাথরের ফ্লোর, ফ্রিজ ও লকারসহ নানান সুবিধা।

ভিআইপি এসব কক্ষের নামকরণ করা হয়েছে ৭১, অমর একুশেসহ নানান ঐহিত্যবাহী নামে।

লঞ্চটিতে একটি বিশেষ ভিআইপি কেবিন তৈরি করা হয়েছে ডুপ্লেক্স বাড়ির মতো করে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা মিলিয়ে এ কেবিনটির নামও রাখা হয়েছে ডুপ্লেক্স।

এছাড়া লঞ্চের ডেক থেকে কেবিন, সোফা, ভিআইপি কেবিন সবখানেই যাত্রীদের বিনোদনের জন্য থাকছে এলইডি টেলিভিশন।

আলোকসজ্জায় লাগানো হয়েছে প্রায় ৫ হাজার বাতি। লঞ্চের কেবিনগুলোর জানালা-দরজার গ্লাসে করা হয়েছে নানান নকশা ও আলোকসজ্জা। কেবিনগুলোর সামনে প্রশস্ত বারান্দাসহ রয়েছে সিলিংসহ দরজা-জানালায় কাঠের কারুকাজ।

লঞ্চের প্রতিতলায় যাত্রীদের জন্য নামাজের আলাদা জায়গা ও প্রতি ফ্লোরে পৃথক শ্রেণির যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা।

শিশুদের জন্য রয়েছে প্লে-গ্রাউন্ড, দ্বিতীয় ও তৃতীয়তলার যাত্রীদের চা-কফি পানের জন্য লঞ্চের সামনে গোছালো বসার জায়গা।

যাত্রীদের ভ্রমণ আনন্দদায়ক করতে পুরো লঞ্চটি ওয়াফাই জোনের আওতায় আনা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য পুরো নৌযানটি সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে।

তৃতীয় তলার ফুডকোর্টে থাকবে যাত্রীদের জন্য বাহারি ধরনের স্ন্যাকস ও খাবার।

চতুর্থ তলাটি হুইল হাউজ (চালকের কক্ষ) হিসেবেই ব্যবহৃত হবে। লঞ্চটিতে জার্মানির তৈরি ২ হাজার ৭৫০ অশ্বশক্তির ২টি মূল ইঞ্জিন ছাড়াও প্রথম শ্রেণি ও ভিআইপি কক্ষসহ ডেক যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস নিশ্চিতকরণে ৩টি জেনারেটরসহ একটি স্ট্যান্ডবাই জেনারেটরও সংযোজন করা হয়েছে।

এতে থাকছে আধুনিক রাডার ও জিপিআরএস পদ্ধতি। এছাড়া বিশেষ প্রযুক্তি ফগ লাইট থাকায় ঘন কুয়াশার মধ্যেও লঞ্চটি নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারবে বলে জানিয়েছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। রাখা হয়েছে অগ্নিনির্বাপক আধুনিক যন্ত্রপাতিও।

তবে ১৪০০ যাত্রীধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন লঞ্চটির প্রতি স্তরের ভাড়া এ রুটে চলাচলকারী ‍অন্যান্য লঞ্চের মতোই থাকবে বলে জানানো হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বেশি যাত্রীধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ও আকারে বড় অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সুন্দরবন-১০  লঞ্চটি বরিশাল নগরীর কীর্তনখোলা নদীর তীরে বেলতলা ফেরিঘাট এলাকায় সুন্দরবন নেভিগেশন ডকইয়ার্ডে নির্মাণ করা হয়েছে।

 

 

 

Related posts