শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ৩ অক্টোবর ২০১৬
নিরাপত্তা বেষ্টনি পেরিয়ে মাঠে প্রবেশ করে মাশরাফির বুকে ঠাঁই পাওয়া সেই ভক্ত ও তার বন্ধুরা মুক্তি পেয়েছেন। অসৎ কোনো উদ্দেশ্যের প্রমাণ না পাওয়ায় রোববার রাত ৯টার দিকে তাদের ছেড়ে দেয়া হয় বলে মিরপুর থানা সূত্রে জানা গেছে।
থানা হাজত থেকে বেরিয়ে মাশরাফি ভক্ত ও তার বন্ধুরা নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছেছেন।
মাশরাফি ভক্ত মেহেদী হাসান ইউনাইডেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। তার বাবার নাম জয়নাল আবেদীন।
তার সঙ্গে থানা হাজতে থাকা তিন বন্ধুর মধ্যে রয়েছেন- আবীর হোসেন, তানভীর আহমেদ মারুফ ও আয়মান আসিফ রাফি। এর মধ্যে আবীর ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র। আর মারুফ ও রাফি এসএইচসি পাসের পর বর্তমানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।
বাড়িতে পৌঁছেই মুক্তির আনন্দ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন মাশরাফি ভক্ত মেহেদি হাসান।
প্রধানমন্ত্রী, টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাত ১১টার দিকে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে স্ট্যাটাস দেন মেহেদি।
ফেসবুক বার্তায় তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। সুস্থ এবং নিরাপদে বাসায় ফিরে আসতে পারছি। আমাকে বাসায় ফিরে আসতে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাশরাফি ভাই, আরাফাত সানি ভাই, বিসিবি, মিরপুর মডেল থানা, সাভার মডেল থানা, ডিএসইউ গ্রুপ সহ আরও অনেক গ্রুপ, আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ফেসবুক ফ্রেন্ডস, আরও যারা ফেসবুক ইউজার আছেন, যারা বিভিন্নভাবে আমাকে সাহায্য করেছেন তাদের কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ। ধন্যবাদ জানানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না আমি।’
রাত বারোটার দিকে নিজের সঙ্গে থানা হাজতে আটক থাকা বন্ধুদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে দেয়া অপর এক ফেসবুক পোস্টে মেহেদি বলেন, ‘স্যরি ব্রাদার্স, আমার জন্য তোরা আমার সঙ্গে থানায় আটক ছিলি। তোদের না বলেই আমি মাঠে চলে গিয়াছিলাম। আমার জন্য অনেক কষ্ট করলি তোরা। আমাকে মাফ করে দে প্লিজ।’
পরে রাত ১টার দিকে দেয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি নিজের কৃতকর্মের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। ভবিষ্যতে এমন ঘটনার জন্ম না দেয়ার জন্য টাইগার ভক্তদের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।
স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, ‘আমি জানি আমার গ্যালারী থেকে মাঠে নেমে গিয়ে আমার বস মাশরাফি ভাইকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরায় মাঠের আইন ভঙ্গ হয়েছে। আর এই ঘটনাটি আমার অতিরিক্ত আবেগ বশত ঘটেছে। আমার এই কাজটা করার পর যে বিসিবি আর পুলিশ ভাইদের এমন চরম ভোগান্তি হবে, তা আমার জানা ছিল না। আমি বিসিবি আর পুলিশ ভাইদের আছে অনেক দুঃখিত। আমার জন্য আপনাদের অনেক কষ্ট হয়েছে। আমি শুনেছি যে, আমার এই ঘটনার জন্য মাঠের মধ্যে থাকা কয়েকজন পুলিশ বরখাস্ত হয়েছেন। আমার গ্যালারির সামনের পুলিশ ভাইরা সারাক্ষণ খুবই সতর্ক ছিলেন। আমি সারাক্ষণই তাদের ফলো করতেছিলাম। আর একজন পুলিশ ভাই যখন অন্য দিয়ে তাকায়, ঠিক তখনই আমি গ্যালারি থেকে লাফ দিয়ে এক দৌড়ে মাঠে চলে যাই। আমার এই অবেগবশত ভুলের জন্য বরখাস্ত হওয়া পুলিশ ভাইদের আবার চাকুরি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। মিরপুর মডেল থানার সকল পুলিশ ভাইরা খুবই হেল্পফুল ছিলেন। তারা আমাকে আর আমার সাথে আটক হওয়া আমার তিন বন্ধুদের কোনোভাবেই আঘাত করেননি। আমি তাদের কাছে খুবই কৃতজ্ঞ। তাছাড়া মিডিয়ার ভাইরা আমাকে আর আমার তিন বন্ধুকে থানা থেকে বের হতে পারার জন্য সাহায্য করেছেন। মিডিয়ার ভাইদেরকে আমার অনেক ধন্যবাদ। আমার মতো এমন ভুল আর কেউ করবেন না প্লিজ। একটু আবেগী হওয়ার কারণেই আমার দ্বারা এই ভুলটি হয়েছে।’
এর আগে শনিবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের সময় মাঠে ঢুকে ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’তে পরিণত হন মেহেদি। তবে শনিবার রাতের এ পাগলামির খেসারত দিয়ে রোববার রাত পর্যন্ত তাকে মিরপুর মডেল থানা হাজতে থাকতে হয়। শুধু মেহেদি একা নন, তার আরও তিন বন্ধুকেও একই খেসারত দিতে হয়।