বৈশাখের আয়োজন গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা সরকারের

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ২২  জানুয়ারি ২০১৭

বৈশাখের আয়োজন গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা সরকারের

বৈশাখের আয়োজন গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা সরকারের

আগামী পহেলা বৈশাখ আরো বেশি আড়ম্বরপূর্ণ হবে , পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন কেবল শহরে সীমাবদ্ধ না রেখে গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার বলেছেন,সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ।

‘পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় এ অর্জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন করার অংশ হিসেবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং চারুকলা অনুষদ এ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

মন্ত্রী বলেন, পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা জাতীয় ঐহিত্য হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা গর্বিত। এই স্বীকৃতি উদযাপন করতে আগামী পহেলা বৈশাখ হবে আরো আড়ম্বরপূর্ণ। আরো বেশি বৈচিত্রময়। আরো বেশি সুন্দর। যাতে সারা দেশের মানুষ এই ঐতিহ্যের অংশ হতে পারে সেজন্য গ্রামে-গঞ্জে এই শোভাযাত্রা আয়োজনের পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে। এব্যাপারে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন,” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুল তলায় আজ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব আকতারী মমতাজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক শেখ আফজাল হোসেন এবং মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের প্রথম উদ্যোক্তাদের একজন শহীদ আহমেদ মিফু।

আগামী পহেলা বৈশাখ আয়োজনের বৈচিত্রময় পরিকল্পনা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে বাদ্যযন্ত্রের কোন অভাব নেই। সমস্ত বাদ্যযন্ত্র একসাথে করে আমরা দেখাতে পারি আমাদের বাদ্যযন্ত্রেরই কতরকম বৈচিত্র্য রয়েছে। ১৪২৪ সালের পহেলা বৈশাখ আরো আড়ম্বরপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য ১০০ জন দোতরা বাদক, ১০০ জন ঢুলি বাদকসহ আরো নানা আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বাঙালীর পহেলা বৈশাখ একটি সার্বজনীন, অসাম্প্রদায়িক উৎসব। এটি সমগ্র জাতির মিলনস্থল। এই উৎসবকে আরো জোরালো ও সুন্দরভাবে উদযাপন করার মধ্য দিয়ে আমরা শক্তিশালীরূপে একটি বার্তা দিতে চাই যে, বাঙালী জাতি একটি অসাম্প্রদায়িক জাতি। আমাদের সংস্কৃতি আমাদের সম্পদ। এই সংস্কৃতি নিয়ে সারা পৃথিবীতে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছি। কোন অপশক্তি আমাদের এই অর্জনকে ছিনিয়ে নিতে পারবেনা।

মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্যোক্তাদের একত্র করে তাদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়ার জন্য ইতোমধ্যেই সরকারের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।

অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এ অর্জনকে গৌরবের ও আনন্দের উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির শাসনামলে চারুকলা অনুষদের কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মিলিত প্রচেষ্টায় এই মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। যা সেসময় স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের বিরুদ্ধে এক জোরালো প্রতিবাদ হিসেবে রূপ নেয়। সেই কালো সময়ে যাঁরা এই মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করেছেন তাদের প্রতি তিনি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে এই অর্জনকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদ এবং যাঁরা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের প্রতি উৎসর্গ করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ১৯৮৯ সালের পহেলা বৈশাখে প্রথমবারের মতো এ মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বর্ষবরণের অনিবার্য অনুষঙ্গ হিসেবে মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজন করা হয়। যা এদেশের চিরায়ত সংস্কৃতির প্রতিক হয়ে ওঠে। প্রায় চার দশকের এই ঐতিহ্যবাহি মঙ্গল শোভাযাত্রা গত ২৮ নভেম্বর ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি লাভ করে।

আলোচনা অনুষ্ঠানের আগে সংস্কৃতি মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গন থেকে শুরু হয়ে চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় এসে শেষ হয়। এতে শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা অংশ নেন। আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

 

 

Related posts