বাবুল আক্তার স্ত্রীর লাশ দেখতে চট্টগ্রামে

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম। ৫ জুন  ২০১৬

বাবুল আক্তার স্ত্রীর লাশ দেখতে চট্টগ্রামে

বাবুল আক্তার স্ত্রীর লাশ দেখতে চট্টগ্রামে

পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার ছিলেন জঙ্গিদের আতঙ্ক। একের পর এক জঙ্গি আস্তানা উচ্ছেদ, গ্রেপ্তার আর অস্ত্র উদ্ধার করে প্রশংসিত হয়েছিলেন সবখানে। স্ত্রীর লাশ দেখতে এখন চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন তিনি।

নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খাতুন ওরফে ‍মিতু আক্তার (৩২) খুন হওয়ার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দৃশ্য এটি। রবিবার সকালে স্ত্রী খুনের সময় বাবুল আক্তার ছিলেন ঢাকার পুলিশ হেডকোয়ার্টারে। এরপর সেখান থেকে হেলিকপ্টারে তাকে পাঠানো হয় দামপাড়া পুলিশ লাইন মাঠে। সেখান থেকে গাড়িতে যখন চমেক জরুরি বিভাগে আসেন তখন পৌনে ১১টা।

কিন্তু আসার পরপরই কান্নায় ভেঙে পড়েন অসম সাহসী মানুষটি। মানসিক ভাবে তাকে বিপর্যস্ত দেখাচ্ছিল। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে স্ত্রীর মরদেহের পাশে না নিয়ে আরএমও’র কক্ষে বসতে দেওয়া হয়। কিছুটা ধীরস্থির বা স্বাভাবিক হলেই মরদেহের পাশে যাওয়ার অনুমতি দেবেন চিকিৎসকরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন তিনি খুবই বিধ্বস্ত। এ অবস্থায় স্ত্রীর মরদেহ দেখলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়বেন এমন আশঙ্কাতেই চিকিৎসকরা সময় নিচ্ছেন। ’

পুলিশ হেডকোয়ার্টারে কর্মরত পুলিশ সুপার ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খাতুন ওরফে ‍মিতু আক্তারকে (৩২) নিখুঁত নিশানায় একটি মাত্র গুলিতেই খুন করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত পরিকল্পিত এবং সন্দেহের তীর জঙ্গিদের দিকে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

রবিবার সকালে নগরীর জিইসি মোড়ে মোটরসাইকেলে আসা তিন দুর্বৃত্ত প্রথমে তাকে মোটরসাইকেল দিয়ে ধাক্কা মারে। এরপর উপর্যুপুরি ছুরিকাঘাত করে এবং সবশেষে মাথার বাম পাশে কপালের কাছে গুলি করে। এ সময় সৌভাগ্যবশত মাহির আক্তার নামে ছোট্ট ছেলেটি দৌড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

হত্যাকাণ্ডের পরপরই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন নগর পুলিশের কমিশনার ইকবাল বাহার। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘অতীতে বাবুল আক্তার জঙ্গি দমনে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছিলেন। এতে সংশ্লিষ্টরা সংক্ষুব্ধ হতে পারেন। এর জের ধরে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে বলে প্রাথমিক ধারণা করছি আমরা। তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত খুনি, কারণ ইত্যাদি বেরিয়ে আসবে।’

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বশির আহমেদ জানান, সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু’র মতো খুব ছোট আকারের পিস্তল থেকে নিখুঁত নিশানায় গুলি করা হয়েছে। মুখের বাম পাশে কপালের নিচে এক গুলিতেই মৃত্যু নিশ্চিত করেই পালিয়ে গেছে খুনিরা। ঘটনাস্থল থেকে মোট চারটি কার্তুজ উদ্ধার করেছি। এর মধ্যে একটি ব্যবহৃত, তিনটি অব্যবহৃত। প্রাথমিক ভাবে নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। বিস্তারিত ময়নাতদন্ত রিপোর্টে জানা যাবে।

ঘটনার পর পরপরই তদন্তকাজ শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) পরিতোষ ঘোষ জানান, খুনিদের শনাক্তের জন্যে ওয়েল ফুডের ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ এবং সড়কের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার মোক্তার আহমদ বলেন, ‘ইতিমধ্যে পুলিশ তদন্তকাজ শুরু করে দিয়েছি। শিগগির খুনিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এ হত্যাকাণ্ডে জঙ্গিরাই জড়িত। কারণ বাবুল আক্তার জঙ্গি দমনে সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন।’

 

Related posts