বাজেট পরবর্তী পুঁজিবাজার

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম। ৯ জুন ২০১৬

বাজেট পরবর্তী পুঁজিবাজার

বাজেট পরবর্তী পুঁজিবাজার

এবারের বাজেটকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। বর্তমানের চলমান সংকট ও অস্থিরতা দূর করতে অতীতের অন্য সময়গুলোর চেয়ে এবারের বাজেট কে নিয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল খুবই সঙ্গত । বাজেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন কিছু না থাকায় বাজেট পরবর্তী লেনদেন ছিল নিম্নমুখি। এবারের বাজেটে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের করমুক্ত লভ্যাংশ সীমা বাড়ানো, তালিকাভুক্ত কোম্পানির আয়করের হার কমানো, মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারহাউজের জন্য স্বল্প সুদের তহবিল গঠনসহ দুই স্টক এক্সচেঞ্জ, মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন, ট্রেকহোল্ডার অ্যাসোসিয়েশন ও স্টেকহোল্ডারদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা থাকলেও অর্থমন্ত্রীর বাজেট বৃক্ততায় তা প্রাধান্য পায়নি। পুঁজিবাজারে কিছু কিছু সংস্কার আর বিএসইসির নানামুখি পদক্ষেপের কারণে শেয়ারবাজার এবার জেগে উঠবে বলে বাজেট বক্তৃতায় আশা করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তুু বাস্তবে পুঁজিবাজার এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারে নি।

প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে দেয়া প্রস্তাবনা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ। এতে বাজারে নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কারণ বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী বাজারে প্রাপ্তি না মেলায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ডিএসইর প্রস্তাবগুলো পূর্ণভাবে বিবেচনায় না নেওয়া হলেও সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাজেট দিয়েছে। যা আগামীতে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

এখনও যেহেতু সময় আছে তাই ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সিএসই ও ডিএসইর প্রস্তাবনাকে বিবেচনায় নিয়ে পুঁজিবাজারের বর্তমান সংকট ও আস্থাহীনতা দূর করতে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। চলমান সংকট ও আস্থাহীনতা দূর করা গেলে এবং বিভিন্ন প্রণোদনা ও নীতি সহায়তার মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারমুখি করতে পারলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুঁজিবাজারের ভূমিকা বহুগুণে বাড়বে।

বাজেট উপস্থাপনের পর প্রথম কার্যদিবস ছিল এ সপ্তাহের রবিবার। আর ওই দিন বাজার এতটাই নেতিবাচক ছিল যে সাধারণ সূচক চারহাজার চারশত পঁচিশ দশমিক আট নয় পয়েন্টে অবস্থান করে। আর লেনদেন হয় ৩৭৮ কোটি টাকা। এরপরের দিন লেনদেন আরো কমে মাত্র ২৮২ কোটি টাকায় নেমে আসে। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওই দিন সূচক আরো কমে চার হাজার চারশত দশ পয়েন্টে অবস্থান করে। এরপর মঙ্গলবার ডিএসইর বড় মূলধনী কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে একমি ল্যাবরেটরিজ লেনদেন শুরু করে। বড় মূলধনী কোম্পানি হওয়ায় এর একটি বড় প্রভাব পুঁজিবাজারে থেকে যায়। আর একারণে মঙ্গল ও বুধ দুই কার্যদিবসই সূচক বাড়ে। আর প্রথম কার্যদিবসে একমি ল্যাবরেটরিজ এর শেয়ারের দর প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়ে যায়। আর আইপিওর এক চতুর্থাংশের বেশি শেয়ার হাত বদল হয়।

তবে প্রথম দিনের তুলনায় একমির দাম দ্বিতীয় দিন পড়ে যায়। নতুন শেয়ার বাজারে আসার পর যে ধরনের ডিমান্ড তৈরি করে পরবর্তীতে বাজার তা ধরে রাখতে পারে না। আর এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। শুরুতে যখন নতুন শেয়ার বাজারে আসে তার নির্দিষ্ট পরিমাণ শেয়ার লক ইন থাকার কারণে মার্কেটে ট্রেড এবল শেয়ার কম থাকায় কারসাজিকারকরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে। আগে নতুন শেয়ার বাজারে আসলে ঋণ বন্ধ করে দেয়া হত। এখন আবার নতুন শেয়ারে ঋণ দেয়া হচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিৎ নতুন শেয়ার বাজারে আসার পর পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতার জন্য মনিটরিং এর ব্যবস্থা জোরদার করা। এতে সাধারণ বিনিযোগকারীরা যেমন নিরাপদ থাকবে তেমনি পুঁজিবাজারও স্থিতিশীল থাকবে।

এদিকে পুঁজিবাজারকে আবারো ফটকাবাজার হিসেবে বাজেট বক্তৃতায় মূল্যায়ন করা হয়েছে। এতে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা অনেক কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এধরনের মূল্যায়ন যারা করেন তাদের উচিৎ বাজারের স্বার্থে ভাষার সঠিক ব্যবহার করা। বাজেটে সব সময়ই সাধারণ বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আশা করে রুগ্ন অবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্য আর্থিক ও কর সুবিধা দেয়া হবে। যদিও এই বাজেটে আশাব্যঞ্জক তেমন কিছুই দেয়া হয় নি। তাই বিনিয়োগকারীদের আশা ভঙ্গ হওয়ার কারণে বাজারে সূচকের নেতিবাচক পরিস্থিতির তৈরি হয়। আর পরবর্তীতে বাজেটে অন্তর্বর্তীকালীন সুবিধা না দেয়া হলে এ অসন্তোষ আরো বাড়তে পারে। যেহেতু বাজেট পাসের আগে এখনও সময় আছে তাই পুঁজিবাজারের জন্য পুনরায় সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। কেননা পুঁজিবাজারবান্ধব বাজেট বর্তমান সংকট ও আস্থাহীনতা দূর করতে পারবে।

 

Related posts