শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম। ২০ জুলাই ২০১৬
আরও একটি অভ্যুত্থান আতঙ্কে তুরস্ক সরকার রেড এলার্টে রয়েছে। গত শুক্রবার রাতে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর চারদিন কেটে গেছে। এ সময়ে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান অবস্থান করছেন ইস্তাম্বুলে। তিনি এখনও রাজধানী আঙ্কারায় ফেরেননি। এখনও আঙ্কারায় ফেরাকে তিনি নিরাপদ মনে করছেন না। এমনই একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টে।
এরই মধ্যে তুরস্কে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ৪৯ হাজারেরও বেশি সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিচারকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিপুল সংখ্যক মানুষকে। এর ফলে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
দেশটির নেতারা আশঙ্কা করছেন, শুক্রবারের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর দ্বিতীয় আরও একটি অভ্যুত্থান ঘটতে পারে। সেনাবাহিনীর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটকে তাদের ঘাঁটিতে সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। রাজধানী আঙ্কারা এখনও পুরো নিরাপদ মনে হচ্ছে না। তাই নিজেকে ইস্তাম্বুলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। তার প্রশাসন বুঝতে পেরেছে যে, অভ্যুত্থানপন্থি সিনিয়র নেতাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর ৬ লাখ সদস্য ও গোয়েন্দা সংস্থা। এর শিকড় অনেক গভীরে বলে প্রশাসন আশঙ্কা করছে।
মঙ্গলবার আদালত ৮৫ জন জেনারেল ও অ্যাডমিরালকে জেলে পাঠিয়েছে। মোট ৩৭৫টি এমন পদ আছে সেখানে। তার ভিতর থেকে ৮৫ জনকে জেলে পাঠানো মানে হলো এক চতুর্থাংশ এখন জেলে। এর ফলে সরকার মনে করছে, অভ্যুত্থান চেষ্টায় আরও অনেক সিনিয়র কর্মকর্তা ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গ জড়িত আছে।
তবে একটি সূত্র বলেছে, আটক করা জেনারেলের সংখ্যা ১২৫। মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয়েছে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের বিমান বাহিনী বিষয়ক উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট কর্নেল এরকান ক্রিভাককে। দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে কুর্দি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে সেকেন্ড আর্মির সেনারা। তাদেরকে তাদের ক্যাম্পের ভিতর থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেকেন্ড আর্মি কমান্ডার জেনারেল আদেম হুদুতিকে এরই মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি সেনাবাহিনীর একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা। ইস্তাম্বুলে সেনাবাহিনীর তৃতীয় কোরের প্রধান ঘাঁটির গেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সিটি করপোরেশনের ময়লা ফেলা ট্রাক ও ভারি যানবাহন রেখে।
ইস্তাম্বুলে ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের ফরেন রিলেশন্স বিষয়েক কর্মকর্তা আসলি আইদিনতাসবাস বলেছেন, তারা (সরকার) আরও একটি অভ্যুত্থানের আশঙ্কা করছে। তারা এ জন্য সিনিয়র কর্মকর্তাদের, বিচারকদের গ্রেপ্তার করছে। এ ছাড়া বরখাস্ত করা হয়েছে বিভিন্ন খাতের বিপুল সংখ্যক সদস্যকে। গোপনে অভ্যুত্থান চেয়ায় সমর্থন দেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সামরিক সচিব আলী ইয়াজিসিকে। ওদিকে প্রেসিডেন্ট এরদোগান ও তার প্রশাসন যেভাবে গ্রেপ্তার বা চাকরিচ্যুতি করে যাচ্ছে তাকে অনেক তুর্কি ও বিদেশি সরকার ভাল চোখে দেখছে না। তারা মনে করছে এ সুযোগ সদ্ব্যবহার করে এরদোগান তার প্রতি ও তার ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি)র প্রতি অনুগত নয় এমন প্রতিজন ব্যক্তি থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার চেষ্টা করছেন।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫৭৭ জন ডিনকে বরখাস্ত করেছে উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক বোর্ড। জাতীয় শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রণালয় বলেছে, নির্বাসিত ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে তারা বরখাস্ত করেছে ১৫২০০ কর্মকর্তা কর্মচারিকে। তবে গুলেন ও তার সমর্থকরা প্রকাশ্যে এ অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।