শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম। ২৫ জুলাই ২০১৬
তুরস্কে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েফ এরদোগান একের পর এক যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তা দেশটির জনমনে কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে এটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। কারণ প্রেসিডেন্টের এসব সিদ্ধান্তে তার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার বিষয়টি স্পষ্ট।
সম্প্রতি তিনি যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা আধুনিক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে কোনোভাবেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তার বেশকিছু সিদ্ধান্তের মধ্যে ভিন্নমতের রাজনৈতিক কর্মীদের সমূলে নিশ্চিহ্ন করার বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে। এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার ফলে কোনো শাসক সাময়িকভাবে রাজনৈতিক সুফল পেলেও দীর্ঘমেয়াদে যে সুফল পান না, এটি বারবার প্রমাণিত হয়েছে। কারণ বর্তমানে কোনো দেশের জনগণই একনায়কতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে দীর্ঘ সময় সহ্য করবে না। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি যেসব কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা একনায়কতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার নিকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবেই বিবেচিত হতে পারে।
তুরস্কে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর ইতিমধ্যে হাজার হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে; পদচ্যুত বা বরখাস্ত করা হয়েছে অনেক কর্মীকে; সন্দেহভাজনদের আটকের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে। এ রকম আরও অনেক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যা ভিন্নমতের রাজনৈতিক কর্মীদের কোণঠাসা করবে।
সম্প্রতি বিপুলসংখ্যক বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৩৫ মেডিকেল ইন্সটিটিউট বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকেই তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্টের দমননীতির একটি বিশেষ দিক স্পষ্ট হয়। একসঙ্গে এত সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করার ফলে জনমনে যে বিশেষ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে, এটাই স্বাভাবিক। তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্টের বোঝা উচিত, ভিন্নমতের রাজনৈতিক কর্মীদের দমন করে সাময়িকভাবে কিছুটা সুবিধা পাওয়া গেলেও দীর্ঘমেয়াদে এ ধরনের দমননীতি তার বা তার দলের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না।
গত শতকের ৪০ বা ৫০ দশকের মতো কোনো নীতি অবলম্বন করে আজকের আধুনিক বিশ্বে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় একদিকে যেমন জনগণের স্বাধীন মতামতকে গুরুত্ব দিতে হয়, একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতামতকেও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া অপরিহার্য হয়ে পড়ে। তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে আধুনিক গণতান্ত্রিক রীতিনীতির প্রতিফল যে ঘটছে না এতে কোনো সন্দেহ নেই।
সাধারণভাবে কোনো দেশের অভ্যুত্থানকারীরা যে ধরনের কঠোর দমননীতি অবলম্বন করে, তুরস্কের বর্তমান নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের আচরণে সে নীতি প্রতিফলিত হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান দীর্ঘদিন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর থেকেই তার শাসনকাল দীর্ঘায়িত করার নানারকম প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তার এই প্রচেষ্টা জনমনে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তাতে সন্দেহ কী! তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্টের স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা দেশটির শতবর্ষের ঐতিহ্যকে যেভাবে ম্লান করে দিচ্ছে, এ প্রক্রিয়া যে বেশিদিন স্থায়ী হবে না, এটা সহজেই অনুমান করা যায়।
একনায়কতান্ত্রিক কায়দায় নিপীড়নের মাধ্যমে সাময়িকভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব হলেও আধুনিক সমাজে তা বেশিদিন চালু রাখা সম্ভব হবে না- এই সাধারণ বিষয়টি তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট এবং তার অনুগত কর্মীরা বুঝতে দেরি করলে তা তুরস্কের জন্য আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে।
ড. দেলোয়ার হোসেন : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়