শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ২৬ মার্চ ২০১৭
মূল বেতনের দ্বিগুণ ওভারটাইম নিচ্ছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) গাড়ি চালকরা। প্রচলিত শ্রম আইন অনুযায়ী ওভারটাইম কখনোই মূল বেতনের বেশি হতে পারবে না। কিন্তু এক্ষেত্রে নিয়ম ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এর পেছনে রয়েছে শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট। এর মধ্যে অনেকেই কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) নেতা। জাগো নিউজের অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একজন কর্মচারীর সারা মাসে অফিস সময় ধরা হয় গড়ে ১৭৫ ঘণ্টা। এটা ধরেই তাদের প্রতি ঘণ্টার বেতন হিসাব করা হয়। তবে ১৯৮০ সালে সরকারি আদেশ অনুযায়ী ছুটির দিনসহ গাড়ি চালকদের মাসে সর্বোচ্চ ২৫০ ঘণ্টা ওভারটাইম দেয়া যায়। তবে তা কখনোই মূল বেতনের বেশি হতে পারবে না।
কিন্তু ডিএসসিসির প্রভাবশালী গাড়ি চালকরা এই নিয়ম না মেনেই দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ পর্যন্ত ওভারটাইম দাবি করেন। ডিএসসিসির শীর্ষ কর্মকর্তারা তা অনুমোদনও দিয়ে যাচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ডিএসসিসির গাড়ি চালকদের মধ্যে ১৮০ জনকে ওভারটাইম দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১০০ জন ভারী গাড়িচালক এবং ৮০ জন হালকা গাড়িচালক রয়েছেন। এসব গাড়ি চালকদের জন্য সর্বমোট ৩০ লাখ ৬৭ হাজার ২৮০ টাকার ওভারটাইম বিল করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি ফাইল পরিবহন শাখা থেকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখায় পাঠানো হয়েছে। করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ফাইলে স্বাক্ষর করে বিল পরিশোধের জন্য হিসাবরক্ষণ শাখায় পাঠিয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে এ চক্রটির সঙ্গে করপোরেশনের শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা জড়িত। তারা বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটিয়ে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করছেন এবং এ সংক্রান্ত ফাইল অনুমোদনের জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শ্রমিকদের অতিরিক্ত ওভারটাইম প্রদানের জন্য হুমকিও দিচ্ছেন শ্রমিক নেতারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট শাখার একজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে কথা বললে এখানে চাকরি করা কঠিন। তারা তাদের লোকজন নিয়ে প্রায় সময়ে অফিসে এসে বসে থাকেন। তদবির করে। তাদের বিরুদ্ধে সাধারণত কেউ কথা বলেন না। তারা রাজনীতি করেন। যে কারণে তাদের বিভিন্ন তদবির মানতে হয়।
এদিকে, করপোরেশনের গাড়ি চালকদের ওভারটাইম নিয়ে এমন তুঘলকি কাণ্ডে ডিএসসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। কিন্তু নাজেহাল হওয়ার ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে পারছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের ওই ১৮০ জন চালকের মধ্যে পরিবহন চালক ও কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সব নেতাই আছেন। অথচ এদের কেউ নিয়ম অনুযায়ী গাড়ি চালান না। তারা করপোরেশনের দফতরে দফতরে বিভিন্ন বিষয়ে তদবির ও দলবাজি নিয়ে ব্যস্ত। কাজ না করলেও নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন তারা। বর্তমানে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ওভারটাইমও।
শুধু তাই নয়, তারা সিটি করপোরেশনের পরিবহন বিভাগের গাড়ি চালক হলেও নিজেরাই চলাচল করেন মাইক্রোবাসে। গাড়ি চালানোর পরিবর্তে এই কর্মচারীরা নিজেরাই চালক ভাড়া করে নিজেদের মাইক্রোবাসে যাতায়াত করেন। এমনকি, বছরের পর বছর ধরে করপোরেশনের কোনো যানবাহন তারা না চালালেও মূল বেতনের পাশপাশি ওভারটাইমও নিচ্ছেন। এ নিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগে। এতে ক্ষুব্ধ অপর গাড়ি চালকরা, যারা ওই ওভারটাইমের টাকা পান না।
এই তালিকায় রয়েছেন, চালক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আক্তার হোসেন দেওয়ান, সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম। আরও রয়েছেন সংগঠনটি কয়েকজন নেতা। তারা হলেন- আলমগীর, আব্দুর রশীদ, ইব্রাহীম, মো. অহিদ উল্লাহ খান, ফকরুল হাসান, আব্দুল বারেক, সালাউদ্দিন, মাসুদ আহমদ ও আবুল কালাম পাটোয়ারি।
এ বিষয়ে চালক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আক্তার হোসেন দেওয়ান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা কাজ করি তবে সংগঠন চালানোর কারণে ২-১ ঘণ্টা কমবেশি হয়।
ওভারটাইমের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা যখন ময়লার ভাগাড়ে গাড়ি নিয়ে যাই তখন বিভিন্ন ময়লা ঢুকে গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে যায়। চাকা ঠিক করার টাকা সিটি করপোরেশন সময়মতো দেয় না। ফলে বাধ্য হয়ে নিজের পকেটের টাকা দিয়ে চাকা ঠিক করতে হয়। তাই ওভারটাইমের টাকা দিয়ে ক্ষতিটা পুষিয়ে নিতে হয়।
চালক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম কাজ না করার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমরা ঠিকমতো কাজ করি। আমাদের কোনো ছুটি নাই। তাই আমরা ওভারটাইম বেশি পাই।
জানতে চাইলে ডিএসসিসির পরিবহন ব্যবস্থাপক গোলাম মোর্শেদ জাগো নিউজকে বলেন, শ্রমিক নেতারা কাজ করেন না এটা ঠিক নয়। তারা কাজ করেন। হয়তো কেউ বেশি করেন, কেউ কম করেন।
ওভারটাইমের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা যুগ যুগ ধরে এভাবেই চলে আসছে। তারা শ্রমিক নেতা। প্রাধান্য তো একটু পাবেই।