শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ১৭ জানুয়ারি ২০১৭
অফিস ফেরা স্বামীর কাছ থেকে গৃহিনীকে যে কথাটি প্রায়ই শুনতে হয় তা হল, ‘… কিন্তু সারাদিন বাসায় করোটা কি?’
বেশিরভাগ গৃহিণীকে অনেক সময়ই কোনো কাজের খুত ধরে কিংবা অন্য কোনো কারণে এ কথা শুনিয়ে থাকে চাকরিজীবী স্বামী। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডাভিত্তিক ট্যাটু শিল্পী রায়সেল ক্যাসেলবেরি সকল গৃহিণীর প্রতি সম্মানার্থে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। বিস্ফোরণের মতো ফেসবুকে ছড়িয়েছে সেই পোস্ট। তার শক্তিশালী লেখার পোস্টে লাইক পড়েছে ৬ লাখ ৪৭ হাজারের বেশি এবং পোস্টটি শেয়ার হয়েছে ৩ লাখ ১১ হাজারের বেশি।
নিশ্চয় মনে হচ্ছে, এত বেশি সংখ্যক লাইক ও শেয়ার হয়েছে! কিন্তু এটা আসলে যথেষ্ট নয় কারণ পোস্টটি প্রত্যেকেরই পড়া উচিত গৃহিণীকে বোঝার জন্য যে, তারা কতটা উৎসর্গ করে।
যা হোক, সকলেই যে এই নারী ট্যাটু শিল্পীর লেখাটির সঙ্গে একমত হয়েছেন তা কিন্তু নয়। কয়েকজন কর্মজীবী নারী তার পোস্টে সমালোচনা করেছেন এই বলে যে, ‘তারা বাসার দায়িত্ব পালন করেন এবং চাকরিও করেন।’ এ প্রসঙ্গে ক্যাসেলবেরি বলেন, কর্মজীবী মা অথবা কর্মজীবী বাবা সহ যে কেউ লেখাটি পড়ার সময় নিজের জীবনের পরিস্থিতির সঙ্গে মানানসই শব্দ জুড়ে পড়ার জন্য।
গৃহিণীদের সম্মানার্থে ফেসবুকে ক্যাসেলবেরির আলোচিত ‘আমার স্ত্রী কাজ করে না। আমার স্ত্রী কাজ করে না!!!’ শিরোনামের লেখাটি তুলে ধরা হল। তিনি তার লেখায় কাল্পনিক একটি কথোপকথনের তুলে ধরেছেন।
একজন মনোবিদের (ম) সঙ্গে এক স্বামীর (স্ব) কথোপকথন:
ম: আপনি কি করেন?
স্ব: আমি ব্যাংকে হিসাবরক্ষকের কাজ করি।
ম: আপনার স্ত্রী?
স্ব: সে কাজ করে না। সে গৃহিণী।
ম: আপনার পরিবারে সকালের নাস্তা কে বানায়?
স্ব: আমার স্ত্রী। কারণ সে তো কাজ করে না।
ম: আপনার স্ত্রী ঘুম থেকে কখন ওঠেন?
স্ব: তাকে তাড়াতাড়ি জাগা লাগে কারণ বেশ কিছু আয়োজন করতে হয়। সে সন্তানদের খাবারের আয়োজন করে, তারা স্কুলের পরিপাটি পোশাক পড়েছে কিনা তা নিশ্চিত করে, সকালে নাস্তা ঠিকমতো করেছে কিনা, দাঁত ব্রাশ করেছে কিনা, স্কুলের সবকিছু ঠিকমতো নিয়েছে কিনা। তাকে শিশুর সঙ্গেই সকালে উঠতে হয়, শিশুর ডায়াপার বদলে দেয়া ও পোশাক পরিবর্তন করার জন্য। সময়মতো বুকের দুধ খাওয়ানো এবং অন্যান্য নাস্তা তৈরি করা লাগে।
ম: আপনার সন্তান কিভাবে স্কুলে যায়?
স্ব: আমার স্ত্রী নিয়ে যায়। কারণ সে তো কাজ করে না।
ম: সন্তানকে স্কুলে দিয়ে, এরপর সে কি করে?
স্ব: যেহেতু সে সময়টা বাইরে রয়েছে, তাই জরুরি কোনো কিছু থাকলে তা করে। যেমন বাসার কোনো বিল বাকি থাকলে তা পরিশোধ করে বা সুপারমার্কেট থেকে বাজারসদাই করে, কোলের শিশুকে নিয়েই। কখনো কখনো সে প্রয়োজনীয় কোনো আইটেম কিনতে ভুলে যায়, তখন একাধিকবার তাকে যেতে হয়। বাসায় ফিরে সে শিশুকে খাবার খাওয়ায়, বুকের দুধ খাওয়ায়, ডায়াপার পরিবর্তন করে, ঘুম পাড়ায়। কিচেনের আয়োজন, কাপড় ধোয়া, রুম পরিস্কার করে। কারণ বুঝতেই তো পারছেন, তাকে তো আর কাজ করতে হয় না।
ম: সন্ধ্যায়, অফিস থেকে বাসায় ফেরার পর, আপনি কি করেন?
স্ব: অবশ্যই, বিশ্রাম নিই। কারণ সারাদিন ব্যাংকে কাজের পর ক্লান্ত থাকি।
ম: আপনার স্ত্রী রাতে কি করে?
স্ব: সে রাতের খাবার তৈরি করে এবং আমাকে ও সন্তানের খাবার পরিবেশন করে। বাসনপত্র ধোয়, বিছানা গোছগাছ করে, সন্তানের স্কুলের হোমওয়ার্কে সাহায্য শেষে রাতের আরামদায়ক পোশাক পরায়, গরম দুধ খাওয়ায়, রাতের দাত ব্রাশ নিশ্চিত করে, শিশুকে নতুন ডায়াপার পরায়। এরপর সে যখন ঘুমাতে যায় তখন আরো কয়েকবার ওঠে সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ায়, প্রয়োজন পড়লে ডায়াপার পরিবর্তন করে। কারণ তার তো সকালে কাজে যাওয়ার তাড়া নেই।
– বিশ্বে বেশির ভাগ গৃহিনীর দৈনন্দিন রুটিন অনেকটা এরকমই। যা সকালে শুরু হয় এবং ভোররাতে শেষ হয়। এটাকেই কী বলে, ‘সে কাজ করে না?’
গৃহিণী হওয়ার জন্য কোনো ডিপ্লোমা নেই, কিন্তু পারিবারিক জীবনে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা লাগে! তাই প্রশংসা করুন আপনার স্ত্রী, মা, দাদী, চাচী, বোন, কন্যার…. কারণ তাদের এই স্যক্রিফাইস অমূল্য।
কেউ একজন এক নারীকে জিজ্ঞাসা করেছিল, আপনি কি কাজ করেন, নাকি শুধুই ‘গৃহিণী’?
তার উত্তর:
* আমি একজন স্ত্রী হিসেবে বাসার কাজ করি, দিনের ২৪ ঘণ্টাই…
* আমি একজন মা,
* আমি একজন নারী,
* আমি একজন বোন,
* আমি হচ্ছি অ্যালার্ম ঘড়ি,
* আমি হচ্ছি রাধুনি,
* আমি হচ্ছি দাসী,
* আমি হচ্ছি শিক্ষক,
* আমি হচ্ছি বারটেন্ডার,
* আমি হচ্ছি শিশু লালন পালনকারী,
* আমি হচ্ছি নার্স,
* আমি হচ্ছি মেন্যুয়াল ওয়ার্কার,
* আমি হচ্ছি নিরাপত্তা কর্মী,
* আমি হচ্ছি পরামর্শদাতা,
* আমি হচ্ছি সান্ত্বনাকারী,
* আমার কোনো অবকাশযাপন লাগে না,
* আমার অসুখ-বিসুখ হওয়ার লাইসেন্স নাই,
* আমার কোনো সাপ্তাহিক ছুটি নেই,
* আমি দিনে এবং রাতে কাজ করি,
* আমাকে সব সময় দায়িত্বে থাকতে হয়,
* আমি কোনো বেতন নেই না এবং….।
অথচ তারপরও গৃহিণীকে শুনতে হয়, ‘বাসায় সারাদিন করোটা কি’।
সকল নারীদের প্রতি, যারা তাদের জীবন পরিবারের কল্যানে নিবেদিত রাখে, উৎসর্গিত একটি বাক্য- ‘নারী হচ্ছে লবণের মতো: তার উপস্থিতি মনে হয় না কিন্তু অনুপস্থিতি সবকিছুকেই বেস্বাদ করে।’
তথ্যসূত্র: বোরড্ পান্ডা