শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ১০ জানুয়ারি ২০১৭
বাংলাদেশ বিমানের কেবিন ক্রু কাজী মো. আশরাফ আল কাদের হ্যাপির সততায় গর্বিত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ফ্লাইটে এক যাত্রীর ফেলে যাওয়া তিন হাজার ২৮৫ পাউন্ড পেয়েও প্রকৃত মালিককে ফিরিয়ে দিয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। এই সততার স্বীকৃতি স্বরুপ আশরাফ আল কাদের হ্যাপিকে একটি প্রশংসাপত্র দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
বিমান এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এ এম মুসাদ্দিক আহমেদ সোমবার বলাকা’য় কেবিন ক্রু কাজী মো. আশরাফ আল কাদের হ্যাপির সততার স্বীকৃতিস্বরূপ এই প্রশংসাপত্র তুলে দেন।
এ সময় বিমান এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও বলেন, এ ঘটনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ গর্বিত। কর্তৃপক্ষ মনে করে এ ঘটনায় দেশের মানুষের প্রতি প্রবাসীদের আস্থা ও বিশ্বাস দৃঢ় হবে। একইভাবে বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্মাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।
উল্লেখ্য, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের লন্ডন-ঢাকা রুটের বিজি-০০২ ফ্লাইটের কেবিন ক্রু কাজী মো. আশরাফ আল কাদের হ্যাপি একজন যাত্রীর হারিয়ে যাওয়া ৩ হাজার ২৮৫ পাউন্ড পেয়ে পরবর্তীতে তা টাকার মালিক লন্ডন প্রবাসী শামীম আহমেদ চৌধুরীকে ফেরত দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ঘটনাটি ঘটে গত ১৪ ডিসেম্বর। সেদিন ফ্লাইটটি লন্ডন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে উড্ডয়নের প্রস্তুতিকালে ফ্লাইটের একজন যাত্রী কেবিন ক্রু হ্যাপির দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং সিট পকেটে পড়ে থাকা একটি পলিথিন প্যাকেট ফেলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
প্যাকেটটি যাত্রী সাধারণের সামনে দিয়ে নেওয়া শোভন হবে না বিধায় তার নিজের ইউনিফর্মের পকেটে ঢুকিয়ে নেন পড়ে ফেলে দেবেন ভেবে। প্রকারান্তরে তিনি তা করতে ভুলে যান। ফ্লাইটটি সিলেট হয়ে ঢাকায় আসে। তিনি যথারীতি বাসায় যান। বাসায় গিয়ে তিনি দেখতে পান প্যাকেটটিতে রয়েছে ৩ হাজার ২শ ৮৫ পাউন্ড এবং একটি কাগজে লন্ডনের একটি ফোন নম্বর।
হ্যাপি ঐ নম্বরে ফোন করে যাচাই করে নিশ্চিত হন টাকার মালিক লন্ডন প্রবাসী শামীম আহমেদ চোধুরী। তিনি ২৯ ডিসেম্বর ঢাকায় আসেন এবং মোহাম্মদপুরে হ্যাপির বাসায় যান।
শামীম বলেন,‘আমি অভিভূত, আমার কাছে স্বপ্নের মতো লাগছে’। তিনি আরও বলেন, দেশে এখনো অনেক ভাল মানুষ আছেন, অনেক উন্নত দেশেও এত টাকা ফেরত পাওয়া কঠিন। তিনি এই টাকা ফেরত পাওয়ার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, এই দৃষ্টান্তে তিনি তার দেশ নিয়ে এবং জাতীয় এয়ারলাইন্স নিয়ে গর্ববোধ করছেন।
হ্যাপি বলেন, এটি তার নৈতিক দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালন করতে পেরে তিনি খুশি।
প্রসঙ্গত, কাজী মো. আশরাফ আল কাদের হ্যাপি প্রয়াত কাজী নূরুল কাদের ও রাশেদা কাদেরের ছেলে। বরেণ্য সাংবাদিক এবিএম মূসার ভাগ্নে। মোহাম্মদপুর সরকারি স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদালয় থেকে ফাইনান্স এন্ড ব্যাংকিং থেকে পড়ালেখা শেষ করে হ্যাপি বিমানে জুনিয়র পার্সার হিসাবে যোগদান করেন। তিন সন্তানের বাবা হ্যাপির গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলার সিলোনিয়ার কাজী বাড়ি। তার স্ত্রী খাদিজা আক্তার বিথি ভিকারুন নিসা নূন স্কুলের একজন সিনিয়র শিক্ষক।