মে মাসে খুন হয়েছেন ১০২, ধর্ষণ ২১

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম। ৩  জুন  ২০১৬

ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মে মাসে খুন হয়েছেন ১০২, ধর্ষণ ২১

ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মে মাসে খুন হয়েছেন ১০২, ধর্ষণ ২১

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় অর্ধশতাধিক নিহত, শিশু ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, সামাজিক ও রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় মে মাস জুড়ে ছিল যেন মৃত্যুর মিছিল। মাসটিকে ঘিরে দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি অসন্তোষজনক বলে মনে করছে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা (বিএমবিএস)।

ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ মাসটিতে নিহত হয়েছেন ৫৯ জন। এছাড়া অন্যান্য সহিংসতায় আরো ৪৩ জন নিহত হয়েছেল। সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্র নারী নির্যাতন। চলতি বছরের মে মাসে ২১ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের স্বীকার হয়েছে।

বিএমবিএস কমিউনিকেশন অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন অফিসার ফাতেমা ইয়াসমিনের পাঠানো এ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানা গেছে। দেশের মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার মে মাসের মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এসব তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়েছে।

ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতায় মে মাসে নিহত হয়েছেন ৫৯ জন এবং আহত হয় ১ হাজার ৩৩২ জন। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে সহিংসতায় আহত ও নিহতের সংখ্যা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের কারণেই এ সহিংসতার ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছে সংস্থাটি। একইসঙ্গে এত সংখ্যক নিহতের ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের দায় এড়াতে পারে না বলে মনে করছে এ মানবাধিকার সংস্থা।

এছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক কোন্দলে ৪ জন নিহত ও ৪৮ জন আহত হয়েছেন।

সামাজিক অসন্তোষ

প্রলম্বিত বিচার পদ্ধতি, সামাজিক নিরাপত্তার অভাবসহ দেশের আপামর জনসাধারণের মানসিক ও মানবিক চিন্তা চেতনার অবক্ষয় ঘটেছে। যে কারণে সামাজিক অসোন্তুষের শিকার বিভিন্ন ঘটনায় গত মে মাসে ৪৩ জন নিহত ও ১৪৭ জন আহত হয়েছেন বলে মনে করছে সংস্থাটি।

এদিকে, সামাজিক সহিংসতায় মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত দুই মাসে (মার্চ-এপ্রিল) নিহত হয়েছিল ৩২ জন, সেখানে মে মাসেই নিহতের সংখ্যা ৪৩ জন। বেশির ভাগ ঘটনাই ঘটেছে জমি-জমা ও খেলার মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে।

ধর্ষণ

মে মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪০ জন নারী ও শিশু। এদের মধ্যে শিশু ২১ জন। যেখানে বছরের প্রথম তিন মাসে শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছিল ২০ জন। নারী ধর্ষণের শিকার হয় ৭ জন। এছাড়া ৮ জন নারী গণধর্ষণের শিকার হয়, যা বছরের তিন মাসের গড় গণধর্ষণের দ্বিগুন।

ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৪ জনকে। শিশু ধর্ষণের ২১ জন শিশুর মধ্যে ১০ জনই ঢাকা বিভাগের। এছাড়া কুষ্টিয়াতে নিবন্ধন পরীক্ষা দিতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হয় এক নারী এবং লক্ষীপুরে ধর্ষণের পর এক শিশুকে হত্যা করা হয়।

শিশু হত্যা

মে মাসে ১৪ জন শিশুকে হত্যা করা হয়। নারায়ণগঞ্জে আম গাছে ঢিল মারায় সাত বছরের এক শিশুকে হত্যা করা হয়। দিনাজপুরে শিশুকন্যাকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেন মা। যশোরের বেনাপোলে মুন্না নামে এক হোটেল বয়কে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। ঝিনাইদহে সৎ মায়ের হাতে নিহত হয় এক শিশু। নারায়নগঞ্জে সুমাইয়া নামে এক শিশুকে পানিতে ফেলে হত্যা করে মসজিদের এক মুয়াজ্জিন।

আত্মহত্যা

এ মাসটিতে আত্মহত্যা করেছে ৩৫ জন। এদের মধ্যে ১৩ জন পুরুষ ও ২২ জন নারী। ঢাকাতে আত্মহত্যা করেছে ৮ জন নারী ও ৫ জন পুরুষ। বাকি ঘটনাগুলো বরিশাল, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেটে। পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, অভিমান, রাগ ও যৌন হয়রানির কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।

যৌতুক

যৌতুকের কারণে মে মাসে প্রাণ দিয়েছেন ৬ জন নারী। ঢাকা বিভাগে যৌতুকের বলি হয়েছেন ৪ জন। নারায়নগঞ্জে স্বামী শ্বশুরের দাবিকৃত যৌতুক বাবদ অটোরিকশা না দেয়ায় লাকি আক্তার নামে এক নববধূকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

পারিবারিক কলহ

পারিবারিক কলহে মে মাসে নিহত হন ৩৪ জন, এদের মধ্যে পুরুষ ১২ জন এবং নারী ২২ জন। বিভিন্ন কারণে স্বামীর হাতে নিহত হন ১৮ জন নারী। পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, রাগ, পরকীয়াসহ বিভিন্ন পারিবারিক কারণে এসব মৃত্যু সংগঠিত হয়েছে বলে জানানো হয়।

খুন

মাসটিতে সন্ত্রাসীদের হাতে ৭৪ জন নিহত ও ৩৮ জন আহত হয়েছেন। টাঙ্গাইলে নিখিল জোয়ার্দার নামে এক দর্জিকে হত্যা করে  সন্ত্রাসীরা। এ মাসেই বান্দরবনে এক বয়স্ক বৌদ্ধকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

অন্যান্য সহিংসতা

মাদক নিয়ে অন্যান্য সহিংসতায় ৩ জন নিহত হয়েছে, আহত হয় আরো ৪ জন। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১৯৪ ও আহত ২৯৮ জন। এছাড়া পানিতে ডুবে, অসাবধানবসত, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট, বজ্রপাতসহ নানা ঘটনায় আরো ১৫৭ জন প্রাণ হারিয়েছে।

এছাড়া গণপিটুনিতে ১ জন, বোমা বিস্ফোরণে ৬ জন, ভুল চিকিৎসায় ৪ জন নিহত হয়েছেন।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা মনে করে নাগরিকের মানবাধিকার বঞ্চিত হওয়ায় দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আইনের সঠিক প্রয়োগ, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নৈতিক অবক্ষয় রোধে বিভিন্ন পর্যায়ে কাউন্সিলিং, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতার প্রশিক্ষণ, ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুরষ্কার, সামাজিক সংগঠনগুলোর বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব।

 

Related posts