কাজ না করেই বেতন নিচ্ছে এক হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী ডিএসসিসির মাসে লোকসান দেড় কোটি টাকা

 

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম ।  ২৬  ডিসেম্বর  ২০১৬

কাজ না করেই বেতন নিচ্ছে এক হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী ডিএসসিসির মাসে লোকসান দেড় কোটি টাকা

কাজ না করেই বেতন নিচ্ছে এক হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী
ডিএসসিসির মাসে লোকসান দেড় কোটি টাকা

e7252737f4f2e7fe1e673205d47e1f82ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজে না আসার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। মেয়র নির্বাচিত হয়ে সাঈদ খোকন সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরেও এর প্রমাণ পেয়েছেন।

এরপর তিনি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজে ফাঁকি রোধে ডিজিটাল ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করেন। প্রত্যেককে একটি মোবাইল ফোনের সিমের মাধ্যমে নিয়মিত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। এ পদ্ধতির মাধ্যমে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষের কাছে প্রায় এক হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজে না আসার চিত্র ফুটে উঠেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে গেলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিও কাজে ফাঁকির তথ্য পেয়েছে। আর এভাবে কাজ না করেও প্রতি মাসে প্রায় দেড় কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে ওই কর্মীরা।

ডিএসসিসির সচিব খান মোহাম্মদ রেজাউল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একটি পরিচ্ছন্ন নগরী উপহার দিতে ডিএসসিসির মাননীয় মেয়র সবাইকে নিয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সেখানে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তবে তাদের কাজে ফাঁকির বিষয়টি আমাদের নজরে এলে আমরা ডিজিটাল মোবাইল ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করি। সেখানেও দেখা যায় একটি বিরাট অংশ কাজে আসছে না। অথচ কাজ না করেই দৈনিক হাজিরার টাকা নিচ্ছে তারা। এ বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে একটি কমিটি করা হয়েছে। সেখানেও অনিয়মের বিষয়টি উঠে এসেছে। ’

ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, স্থায়ী ও দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে (মাস্টাররোল) পাঁচ হাজার ১৮২ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করে। স্থায়ী কর্মীদের দৈনিক ৫০০ টাকা, মাস্টাররোলের কর্মীদের দিনে ৪৮০ টাকা করে দেওয়া হয়। সে হিসাবে প্রতি মাসে প্রায় সাত কোটি ৬১ লাখ টাকা খরচ হয় কর্তৃপক্ষের। সেখানে প্রায় এক হাজার কর্মীর পেছনে মাসিক খরচ হয় প্রায় দেড় কোটি টাকা। কাজ না করেই এ অর্থ নিয়ে যাচ্ছে ফাঁকিবাজ পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। এ ছাড়া ৩৮২ জন কর্মী ট্র্যাকিংয়ের বাইরে থাকতে সিম নেয়নি। তারা পুরোপুরি ট্র্যাকিংয়ের বাইরে রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, কাজে ফাঁকি দিতেই তারা সিম নেয়নি। তাদের বেশির ভাগ কর্মচারী নেতা বলে জানা যায়। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে, তারাও মোবাইল ট্র্যাকিংয়ে নেই। অথচ মৃত কর্মীদের বিপরীতেও টাকা নেওয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসসিসির এক কর্মকর্তা জানান, ডিএসসিসির পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সুইজড অব রিপোর্ট (হাজিরা) নেওয়ার পর অনেক জালিয়াতি বেরিয়ে আসা শুরু করেছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সঙ্গে যোগসাজশে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নেতাদের একটি সিন্ডিকেট কাজ করে। তারা বিভিন্ন নাম দিয়ে দৈনিক টাকা নিয়ে যায়। এমন অনেক নেতা রয়েছেন, যাঁদের পরিবারের সব সদস্যের নাম তালিকাভুক্ত করে টাকা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাদের পরিবারের একজনের বেশি কাজে আসে না। স্কুলে পড়াশোনা করে এমন শিশুদেরও শ্রমিক দেখিয়ে টাকা নেওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল হাজিরা নেওয়ার পর থেকে তা ধরা পড়তে শুরু করে। এক হাজারেরও বেশি কর্মী কাজে আসে না। এ পদ্ধতির মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ প্রতি ১০ মিনিট পর পর অর্থাৎ ঘণ্টায় ছয়বার একজন কর্মীর অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণফোন কম্পানির সঙ্গে একটি চুক্তি করে ডিএসসিসি। গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে সব পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিনা মূলে সিম কার্ড সরবরাহ করা হয়। সেদিন নগর ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ডিজিটাল সিস্টেমের উদ্বোধন করেন ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। এ সময় মেয়র পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘যেসব কর্মচারী কাজে ফাঁকি দেবে তাদের ধরতেই এ সিস্টেম চালু করা হয়েছে। ঢাকাকে বসবাসযোগ্য রাখতে আমাকে যতটুকু কঠোর হতে হয়, আমি তা হব। পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কল্যাণেও আমরা সব কিছু করব। আমি চাই না কাউকে শাস্তি দিতে। আমরা সবাইকে পুরস্কৃত করতে চাই। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উচিত হবে এসব বিষয় মাথায় রেখে কাজ করা। ’

ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজে ফাঁকি দিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ অনেক পুরনো। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তারা তাঁদের অধীনে থাকা কী পরিমাণ শ্রমিক দৈনিক কাজ করে তার দাপ্তরিক কোনো হিসাবও উন্মুক্ত করেন না। এসব কর্মীকে নিয়োগসংক্রান্ত সব ফাইলপত্র প্রশাসন বিভাগে থাকার কথা থাকলেও তাঁরা কিছুই জানেন না। ফলে পুরো বিষয়টি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের হাতে এককভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। অভিযোগ রয়েছে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা আর পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নেতাদের সমন্বয়ে একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। তারাই বিভিন্ন ভুয়া নামে বিলের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির উপপ্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খোন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করি। আমাদের হাতেই তাদের নিয়োগ হয়। সেখানে প্রশাসনে হিসাব থাকতে হবে—এটা বাধ্যতামূলক নয়। এ বিভাগ থেকে কেউ কাজ না করে টাকা নিতে পারে না। মোবাইল ট্র্যাকিংয়ে কী ধরা পড়েছে তা আমার জানা নেই। ’

 

Related posts