শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬
এবার স্বাক্ষর সিন্ডিকেটের কবলে পাসপোর্ট। জেনেশুনেই অসম্পূর্ণ পাসপোর্ট তুলে দেয়া হয় গ্রাহকের হাতে। এতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সিল থাকলেও থাকে না তার স্বাক্ষর। পরে টাকার বিনিময়ে ওই স্বাক্ষর দেয়া হয়। ১ হাজার থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয় একটি স্বাক্ষরের জন্য। আর দালালদের খপ্পরে পড়লে গুনতে হয় দ্বিগুণ টাকা। এ সিন্ডকেটকে ধরতে হিমশিম খাচ্ছে পাসপোর্ট অধিদপ্তর। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নতুন এ চক্রকে নিয়ে আমরা বিপাকে পড়েছি। প্রতিদিন কোনো না কোনো গ্রাহক তাদের কবলে পড়ছেন। দেশের প্রায় সবক’টি পাসপোর্ট অফিস ঘিরে রয়েছে এ চক্র। দেশে সর্বমোট ৬৬টি পাসপোর্ট অফিস রয়েছে। এ চক্রের কারণে অনেককে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন দেশের ইমিগ্রেশনে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে পরে পাসপোর্ট অফিসে গেলে টাকার বিনিময়ে পাসপোর্টে স্বাক্ষর করা হচ্ছে। আবার প্রভাবশালী কেউ হলে লোকবলের তুলনায় কাজ বেশি, ভুলে হয়ে গেছে অজুহাত দিয়ে পাসপোর্টে স্বাক্ষর করা হয়। সম্প্রতি এ নিয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগও দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এমআরপি ও এমআরভি প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদুল আলম মানবজমিনকে বলেন, সম্প্রতি এ ধরনের চক্রের কথা জানতে পেরেছি। আমরা চেষ্টা করছি তাদের চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার। প্রতিদিন গড়ে শতাধিক গ্রাহকের পাসপোর্টে স্বাক্ষর ছাড়াই ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে বলে জানান পাসপোর্টের কর্মকর্তারা। এ প্রসঙ্গে পাসপোর্ট ডেলিভারি শাখার কর্মচারী সাইফুল জানান, প্রতিদিনই এরকম পাসপোর্ট পাওয়া যায়। আমাদের নজরে পড়লে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার স্বাক্ষর করে তা দেয়া হয়। তিনি জানান, এসব কাজ আগেই হয়ে আসে। আমরা শুধু ডেলিভারি দিই। এসবের সঙ্গে কেউ না কেউ জড়িত বলে মন্তব্য করেন তিনি। ওই কর্মচারী জানান, গত ১৪ই আগস্ট একবারে ৭০টি পাসপোর্ট পাওয়া যায় যেখানে সহকারী পরিচালকের সিল রয়েছে কিন্তু স্বাক্ষর নেই। এ রকম ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। সম্প্রতি শারমিন নামে এক পাসপোর্ট গ্রাহক তার পাসপোর্টে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার স্বাক্ষর না থাকায় বাংলাদেশ ও ভারতীয় ইমিগ্রেশনে হয়রানির শিকার হন। এ নিয়ে তিনি লিখিত অভিযোগ জানান। তার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ১৬ জুলাই পাসপোর্ট রিনিউ করার পর আমাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। এতে সহকারী পরিচালক এমডি আলী আশরাফের সিল রয়েছে। কিন্তু পাসপোর্টে তার কোন স্বাক্ষর নেই। গত ৫ই আগস্ট স্বপরিবারে ভারতে যাওয়ার উদ্দেশে যশোর বেনাপোল সীমান্তে গেলে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা বিষয়টি নজরে আনেন। প্রথমে তিনি পাসপোর্টে সিল দিতে অপারগতার কথা জানান। প্রায় দুই ঘণ্টা আমাকে ও আমার পরিবারকে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। ওদিকে দিল্লি যাওয়ার জন্য আগে থেকে আমাদের তিনজনের বিমান টিকেট ও হোটেল বুকিং করা হয়। এতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়। শেষ পর্যন্ত ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে আমার পাসপোর্টে সিল দেন ইমগ্রেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। এরপর একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় ভারতীয় ইমগ্রেশনেও। সেখানেও অর্থের বিনিময়ে আমাকে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে দেশে ফেরার আগে দিল্লি বিমানবন্দরে পাসপোর্ট নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। শেষ পর্যন্ত স্পাইস জেট এয়ারলাইনসের কর্মকর্তার মধ্যস্ততায় সমস্যার সমাধান হয়। অভিযোগে তিনি জানান, চার বছর বয়সী বাচ্চাকে নিয়ে এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়া কতটা বেদনাদায়ক তা বলে বোঝাতে পারবো না। তাছাড়া ঘুষ দেয়াটাকে আমি সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি। কিন্তু বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি থেকে মুক্তি পেতে ও পরিস্থিতির শিকার হয়ে আমাকে ঘুষ দিতে হয়েছে। জীবনে এ ধরণের অভিজ্ঞতা এটাই প্রথম। আপনার অধিদপ্তরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার দায়িত্বহীনতা ও অবহেলার কারণে ইমগ্রেশন ও এয়ারপোর্টে আমাকে পরিবারসহ হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। এ ধরণের ঘটনা সত্যিই খুব দুঃখজনক ও মানসিক বেদনাদায়ক। চক্রের বাইরে অনেক সময় ভূলেও এ ধররে ঘটনা ঘটে বলে জানান, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রাশেদুল হাসান। তিনি বলেন, তবে এর সংখ্যা অনেক কম। উদাহরণ দিয়ে তিনি জানান, এক গ্রাহকের পাসপোর্টে এ ঘটনা ঘটলে তিনি আমার মোবাইল ফোন সংগ্রহ করে ফোন দেন। ওই ব্যক্তি পরদিন বিকেলের ফ্লাইটে ইতালি যাবেন বলে জানান। পরে আমি নিজ উদ্যোগে রাতের গাড়িতে ঢাকার বাইরের জেলা থেকে এয়ারপোর্টে এসে স্বাক্ষর করি। পাসপোর্ট অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত প্রায় দেড় কোটি মানুষকে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ডেলিভারি দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার পাসপোর্টের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে নতুন পাসপোর্ট প্রিন্ট দেয়া হয় ১১ থেকে ১৫ হাজার।