উৎসব যখন জীবন্ত মানুষ ‘কবর’ দেয়া

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম ।  ১১  ডিসেম্বর  ২০১৬

 

উৎসব যখন জীবন্ত মানুষ 'কবর' দেয়া

উৎসব যখন জীবন্ত মানুষ ‘কবর’ দেয়া

পৃথিবীতে নানা বৈচিত্র্যময় উৎসবের খবর কম-বেশি সবাই জানি। কিন্তু জীবন্ত মানুষ কবরস্থ করার মত ভয়াবহ কাজও কি উৎসব হতে পারে! আর সে উৎসবের খবরও ক’জনই রাখি!

একজন জীবন্ত মানুষকে কফিনবন্দি করে শুইয়ে দেয়া হয় কবরে। উপস্থিত মানুষজন তখন নেশায় উন্মত্ত।

এই শিউরে ওঠার মতো রীতি উৎসব হিসেবেই পালন হয় কিউবায়। দেশটির রাজধানী হাভানা থেকে ১২ মাইল দূরবর্তী সান্তিয়াগো দে লাস ভেগাস গ্রামে অনুষ্ঠিত ‘ব্যুরিয়াল অফ প্যাচেন্দো’ নামের এক বিচিত্র উৎসবের অংশ হিসেবেই কবর দেয়া হয় একজন জীবন্ত মানুষকে।

১৯৮৪ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে পালিত হয়ে আসছে এই উৎসব।

হাভানার সান্তিয়াগো দে লাস ভেগাস গ্রামে বছরের গোড়ার দিকেই গ্রামের একজনকে নির্বাচন করা হয় ‘প্যাচেন্দো’ হিসেবে, অর্থাৎ উৎসবের দিনে যাকে কবর দেয়া হবে।

তারপর নির্দিষ্ট দিনে কফিনের মধ্যে তাকে শোওয়ানো হয়। শুরু হয় শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ মানুষই থাকেন নেশার ঘোরে।

চলে হাততালি, গান, উল্লাস। মদের বোতল হাতে নেশায় টলটলায়মান অবস্থায় হর্ষধ্বনি আর হাততালির মাধ্যমে তারা উজ্জীবিত করেন একে অন্যকে।

কিন্তু একটি অন্তিমযাত্রায় অংশ নেয়া সকলেই তো আর আনন্দে উৎরোল হতে পারেন না। তাই শোভাযাত্রায় রেখে দেয়া হয় কিছু মহিলাকেও, যাদের দায়িত্ব ওই ‘প্যাচেন্দো’র বিধবা স্ত্রী হিসেবে শোকবিহ্বলতার অভিনয় করা।

শোভাযাত্রাসহ কফিন পৌঁছায় উৎসবের জন্যই আলাদাভাবে তৈরি করা কবরস্থানে। খোঁড়া হয় ছ’ফুট গভীর একটি কবর। উপস্থিত থাকেন ধর্মযাজকও। এরপর যথাবিহিত রীতি মেনে মানুষ সমেত কফিনটিকে শোওয়ানো হয় মাটির গভীরে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। ভূগর্ভে শায়িত কফিনকে ঘিরে কিছুক্ষণ হইহুল্লোড়ের পরেই আবার জীবন্ত মানুষ সমেত কফিনটিকে তুলে আনা হয় উপরে।

কিন্তু এই বিচিত্র উৎসবের তাৎপর্য কী? কে-ই বা এই প্যাচেন্দো?

স্থানীয় বাসিন্দা অ্যালভেরো হার্নান্দেজ জানালেন, ‘প্যাচেন্দো একেবারেই কল্পিত একটি চরিত্র। আসলে ১৯৮৪ সালে গ্রামবাসীরা একটি স্থানীয় কার্নিভালের অন্তসূচক একটি অনুষ্ঠান পালন করবে বলে স্থির করে। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয়, একটি ছদ্ম-অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন করা হবে। সেই সময়ে শহরে একটা নাটক এসেছিল ‘ব্যুরিয়াল অফ প্যাচেন্দো’ নামে। গ্রামবাসীদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল সেই নাটক। হঠাৎ করে কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের অনুষ্ঠানের নাম আমরা স্থির করি ‘ব্যুরিয়াল অফ প্যাচেন্দো’।

 

তিনি জানান, ৫ ফেব্রুয়ারিকে যে এই বার্ষিক অনুষ্ঠানের জন্য স্থির করা হয়, সেটাও ওই রকম আকস্মিক সিদ্ধান্তেরই ফল।

গ্রামবাসী ডিভাল্ডো অ্যাগুইয়ার বিগত তিরিশ বছরে বেশ কয়েকবার এই অনুষ্ঠানে ‘প্যাচেন্দো’ হয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আদৌতে এটা কোনো শোকানুষ্ঠান নয় বরং জীবনকে ভালবাসার উৎসব। কবর থেকে যখন উঠে আসি, তখন যেন নতুন করে জীবনকে ফিরে পাই, নতুন করে বুঝতে পারি জীবনের মূল্য। ‘প্যাচেন্দো’র মধ্য দিয়ে জীবনের মূল্য উপলব্ধি করেন প্রত্যেক গ্রামবাসীও।’

 

Related posts