উদ্বোধনের আগেই দেবে গেছে ৩০ কিলোমিটার

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম। ১১  জুন ২০১৬

উদ্বোধনের আগেই দেবে গেছে ৩০ কিলোমিটার

উদ্বোধনের আগেই দেবে গেছে ৩০ কিলোমিটার

ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক চার লেন প্রকল্পের ঢাকামুখী লেনের ৩০ কিলোমিটার এলাকা দেবে গেছে। ছবিটি ৭ নম্বর প্যাকেজের মিঠাছরা বাইপাস এলাকা থেকে তোলা।

উদ্বোধনের আগেই যানবাহন চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। চার লেন প্রকল্পে চট্টগ্রাম অঞ্চলের দুটি প্যাকেজের অন্তত ৩০ কিলোমিটার সড়ক ইতিমধ্যে দেবে গেছে। ফুলে উঠেছে পিচ ঢালাই। এতে মহাসড়কের এই অংশে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় পড়ছে যানবাহন। সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞরা মহাসড়কের এই অবস্থার জন্য নির্মাণ ত্রুটিকে দায়ী করছেন।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন সম্প্রসারণ প্রকল্পটি উদ্বোধনের অপেক্ষা আরো দীর্ঘ হলো। সর্বশেষ গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন এমন ঘোষণা দিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কিছু অংশে কাজ শেষ না হওয়ায় উদ্বোধনের সেই দিনক্ষণ আর ঠিক থাকেনি। নতুন করে কোনো তারিখও নির্ধারণ হয়নি।

সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার চার লেন সম্প্রসারণ প্রকল্পের সাত নম্বর প্যাকেজের ধুমঘাট সেতু থেকে মিরসরাই সদর অংশ ঘুরে দেখা গেছে, এখানে ঢাকামুখী অংশের একটি লেন চার থেকে পাঁচ ইঞ্চি দেবে গেছে। আবার পিচ ঢালাইও ফুলে উঠে দেবে যাওয়ায় মহাসড়কের এই দূরত্ব পাড়ি দেওয়া যানবাহনগুলোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির দেওয়া তথ্যানুযায়ী, সড়ক দেবে ফুলে যাওয়ায় গত দুই সপ্তাহে কমপক্ষে ২০টি যানবাহন সড়ক থেকে পাশে ছিটকে পড়েছে। এসবের বেশির ভাগই মালবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরি। বুধবার দিবাগত রাত থেকে পরদিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত মিরসরাই অংশে পাঁচটি যানবাহন দুর্ঘটনায় পড়েছে।

ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ ফরিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ধুমঘাট থেকে সীতাকুণ্ডের টেরিয়াইল পর্যন্ত ঢাকামুখী লেনের বেশ কিছু অংশ দেবে যাওয়ার পাশাপাশি পিচ ঢালাই ফুলে ওঠায় গাড়ি চলাচল মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গত সপ্তাহে এখানে দুর্ঘটনায় পড়েছে কমপক্ষে ২০টি গাড়ি। পরে আমরা সেগুলো রাস্তার পাশ থেকে অপসারণ করেছি।’

এদিকে সাত নম্বর প্যাকেজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেজা কনস্ট্রাকশন সড়কের পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ করে তা চার লেন কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয় গত জানুয়ারি মাসে। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি তাদের স্থানীয় অফিসও গুটিয়ে নিয়েছে। তবে চুক্তি অনুযায়ী আরো এক বছর মেরামতের কাজে নিয়োজিত থাকবে তারা।

সড়ক দেবে যাওয়ার এ বিষয়টিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি বড় করে দেখতে নারাজ। রেজা কনস্ট্রাকশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী রবিউল হোসেন বলেন, ‘এটি মারাত্মক কোনো ত্রুটি নয়। জুন মাসের মধ্যেই মেরামত করা হবে।’

গত বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে দেখা গেছে, চার লেন প্রকল্পের ৮ নম্বর প্যাকেজের বড়তাকিয়া বাজার অংশে মিলিং মেশিন (পিচ ঢালাই কাটার স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র) দিয়ে কিছু অংশ মেরামতের চেষ্টা চলছে।

অবশ্য সড়ক দেবে যাওয়া নিয়ে চার লেন সম্প্রসারণ প্রকল্পের চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক প্রকৌশলী অরুণ আলো চাকমা দায়ী করেছেন যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ ও পিচ ঢালাইয়ে মাত্রাতিরিক্ত বিটুমিন ব্যবহারকে। তিনি বলেন, ‘পিচ ঢালাইয়ে অতিরিক্ত বিটুমিন ব্যবহারের কারণে এমনটি হতে পারে। অতিরিক্ত ওজন নিয়ে যানবাহন চললেও এমনটি হতে পারে। এটা গুরুতর কোনো সমস্যা নয়। আমরা মিলিং মেশিনে কেটে এটাকে মেরামত করছি। আশা করছি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’

এদিকে নির্মাণের মাত্র এক মাসের মাথায় সড়ক দেবে গিয়ে ফুলে যাওয়া প্রসঙ্গে ভিন্নমত দিয়েছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল অনুষদের প্রধান প্রফেসর ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদ ওমর ইমাম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সড়কের মাঝের অংশ দেবে ফুলে উঠলে সে ক্ষেত্রে মাটি ও বালু ভরাটে ত্রুটি হওয়ার আশঙ্কা বেশি। আর মাটি ও বালু ভরাটের ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি থাকলে তা সাধারণ উপায়ে মেরামতে সারবে না। সে ক্ষেত্রে রিমুভিং পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।’

 

 

 

Related posts