শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম। ৭ জুলাই ২০১৬
রাজধানীর গুলশনে জঙ্গি হামলার পর পরি বিস্ফোরণে কেঁপে উঠলো কিশোরগঞ্জ। তাও আবার উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতকে ঘিরে। শোলাকিয়ায় ঈদের নামাজের সময় এ হামলা চালায় জঙ্গিরা। এখনো পর্যন্ত বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের, আহত অনেকেই।
ঈদগাহ ময়দানের প্রবেশপথে জঙ্গিদের সঙ্গে গোলাগুলিতে দুইজন পুলিশ সদস্য, হামলাকারী জঙ্গি ও এক নারী নিহত হয়। এছাড়া আহত হয়েছেন আরো বেশকয়েকজন পুলিশ সদস্য। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসার জন্য তাদের ময়মনসিংহ ও ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন- এসআই নয়ন মিয়া এবং কনস্টেবল জুয়েল, রফিকুল, প্রশান্ত, তুষার, মশিউর ও আসাদুল।
এছাড়া আব্দুর রহিম, মোতাহার হোসেন ও হৃদয় নামের তিন মুসল্লিকেও আহতাবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা ঈদের নামাজ পড়তে ওই মাঠে আসেন। ডেপুটি সিভিল সার্জন হাবীবুর রহমান জানিয়েছেন, আহতদের বেশিরভাগেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) সকাল সোয়া ৯টার দিকে দেশের সবচেয়ে বড় এ ঈদগাহের প্রবেশমুখে তল্লাশির সময় জঙ্গিরা হামলা চালায়। জঙ্গিরা আকস্মিকভাবে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। তাদের নিবৃত্ত করতে পুলিশ পাল্টা গুলি ছুড়লে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ ঘটনায় পুলিশ সদস্য জহুরুল হক (৩০), আনসারুল (৩৫), স্থানীয় বাসিন্দা ঝর্না রানি ভৌমিক ও এক জঙ্গি নিহত হয়। তবে নিহত জঙ্গির পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেনি পুলিশ।
হামলার কিছুক্ষণের মধ্যেই জঙ্গিরা পাশের আজিমুদ্দিন হাইস্কুলের পাশের একটি ভবনে আশ্রয় নেয়। এর চারদিক ঘেরাও করে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারি রেস্টুরেন্টে হামলার ষষ্ঠ দিনে ঈদ জামাতে এ বর্বর হামলার ঘটনা ঘটলো।
পুলিশ জানিয়েছে, করস্টেবল জহিরুল ইসলামকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। অন্যদিকে পুলিশ কনস্টেবল আনসারুল (৪০) দুপুর ১২টার দিকে ময়মনসিংহ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএস) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার বাসিন্দা। এছাড়া ঝর্না রানি ভৌমিক ঘরের মধ্যেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
তিনি আরো জানান, দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ময়মনসিংহ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে আহত ছয়জনের অবস্থা আরো খারাপ হলে তাদের হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা সিএমএইচ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে সকাল ৯টার দিকে শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতে ইমামতি করতে স্থানীয় সার্কিট হাউসে পৌঁছান আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসঊদ। ঈদগাহর পথে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়ার সময়ই খবর আসে ঈদগাহর প্রবেশপথে বোমাহামলা হয়েছে। এতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি। প্রধান ইমামের অনুপস্থিতিতে আরেকজন ইমাম ঈদের নামাজে ইমামতি করেন।
খবর পেয়ে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান, ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ পুলিশ ও র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্র্মকর্তারা কিশোরগঞ্জ ছুটে আসেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান জানান, পরিস্থিতি বর্তমানে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। হামলাকারীদের ব্যাপারে এখনো কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি। তবে হামলাকারী দুর্বৃত্তদের আটকে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
পুলিশ দুইজনকে আটক করা হয়েছে বলে কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর মোশারফ হোসেন নিশ্চিত করেছেন।