দাম্পত্য জীবনে সন্দেহের বিষ

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম ।  ২৫ অক্টোবর  ২০১৬

দাম্পত্য জীবনে সন্দেহের বিষ

দাম্পত্য জীবনে সন্দেহের বিষ

বেশ ভালোই কাটছিল ওদের দাম্পত্য জীবন। স্বামীর ভালোবাসায় মুগ্ধ ছিলেন আবেগপ্রবণ মেয়েটি। কিন্তু হঠাৎ করেই সব পাল্টে যেতে শুরু করলো। স্বামীর আচরণে কেমন জানি একটু পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল যা মেয়েটির মনের ভেতর তৈরি করলো সন্দেহ।

কিছুদিন আগেও স্বামী বেচারা অফিস থেকে দ্রুত বাড়ি ফিরত। তারপর বউয়ের সঙ্গে আড্ডা দিত এবং রাতের খাবার দুজন একসঙ্গেই খেতো। কিন্তু ইদানীং তিনি রাত করে বাড়ি ফেরেন, কখনও কখনও বাইরে থেকে খেয়ে আসেন এবং ওই সময় বউ ফোন দিলেও তিনি কথা বলতে আগ্রহ দেখান না। যা মেয়েটির সন্দেহকে বাড়িয়ে তুলেছে। আপনার ধারণা আপনার স্বামী অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন; কিন্তু স্ত্রীর মনে ধারণা জন্মেছে, সন্দেহটা সঠিক কিনা।

এমন সমস্যার মুখোমুখি যদি হন আপনিও, তখন কী করবেন। সন্দেহটা যদি সঠিক হয় তা হলে কীভাবে সমস্যার মোকাবেলা করবেন। মনে রাখবেন, সম্পর্ক বা সংসার ভাঙা খুবই সহজ, কিন্তু টিকিয়ে রাখতে অনেক কৌশলী হতে হয়।

আত্মবিশ্বাসী হোন

একদম ভেঙে পড়া যাবে না। আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। মনে রাখুন এ সমস্যা বিশেষ একজনের নয়। আমাদের সমাজে অনেক নারীর জীবনে এ সমস্যা রয়েছে। কিন্তু এমন সমস্যা সমাধানে নিজের ওপর আত্মবিশ্বাসই যথেষ্ট। আত্মবিশ্বাস, বাস্তবমুখী চিন্তা এবং তার প্রয়োগ এ সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে। সুতরাং নিজের আত্মবিশ্বাস দিয়ে সমস্যা কাটিয়ে সুস্থ এবং সুন্দর জীবনে ফেরার চেষ্টা করতে হবে।

একটু ভাবুন

একজন মানুষের সুস্থ এবং সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য পরিবারের পাশাপাশি বন্ধুরও প্রয়োজন হয়। মানলাম আপনি আপনার স্বামীর খুব ভালো বন্ধু। কিন্তু এর বাইরেও তার অন্য বন্ধু থাকতেই পারে। এমনও হতে পারে তিনি একজন নারী। আপনার স্বামীর কাছে তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। কিন্তু তাদের এ সম্পর্ক যদি আপনাদের দাম্পত্য জীবনে কোনো প্রভাব না ফেলে তাহলে আপনার স্বামী আপনাকে ঠকাচ্ছেন এমন না ভেবে, উচিত হবে তাদের বন্ধুত্বকে সম্মান দেখানো।

প্রতিটি মানুষ চায় স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে। আপনার স্বামীরও সে অধিকার আছে। তাই তিনি নিজের বন্ধুবান্ধব নিয়ে সময় কাটান। যেটাকে আপনি হয়তো ভাবেন অন্য কারও সঙ্গে তার বিশেষ কোনো সম্পর্ক রয়েছে! এমন কোনো ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত হোন।

 

এমন হতে পারে, আপনি আপনার স্বামীর প্রতি অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। যা আপনাকে পজেটিভ করে তুলেছে। আর এ কারণেই আপনার আশংকা তিনি আপনাকে ছেড়ে চলে যাবেন! কিন্তু আপনার এ আশংকার পেছনে কোনো যুক্তি আছে কিনা তা খুঁজে বের করুন।

আবার এমন হতে পারে আপনার স্বামী একটু উদাসীন প্রকৃতির। এ কারণেই হয়তো আপনাদের সম্পর্কের ব্যাপারে যথেষ্ট যত্নবান নন; কিন্তু তাই বলে তিনি অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িত বা আপনাকে ঠকাচ্ছেন এমন ভাবা বোকামি হবে।

খেয়াল করুন

আপনি আপনার স্বামীর সবচেয়ে কাছাকাছি থাকেন। তাই তার আচার-আচরণ বা চাল-চলনের সঙ্গে আপনিই বেশি পরিচিত। আপনার স্বামী নতুন কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন কিনা, তা অনুমান করার জন্য কয়েকটি ব্যাপারে খেয়াল করুন। যেমন- আপনার স্বামী সাজগোজের ব্যাপারে হঠাৎ করে সিরিয়াস হয়েছেন কিনা।

নিজের জন্য বেশি বেশি শপিং করছেন বা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি জামা-কাপড় কিনছেন কি না। অন্যমনস্ক হয়ে সবসময় কিছু ভাবছেন বা আনমনে হাসছেন কিনা। তার হাতখরচ আগের তুলনায় বেড়েছে কিনা জানার চেষ্টা করুন। হঠাৎ করে হাতখরচ বেড়ে যাওয়াটা আপনার জন্য ভালো লক্ষণ নয়। তার ফোনের দিকে খেয়াল রাখুন। ফোন সবসময় কাছে রাখছে বা লুকিয়ে কথা বলছে অথবা ফোনের রিং বাজলেই তার মধ্যে অস্বস্তিভাব চলে আসছে কিনা। এমন হলে এখন থেকেই আপনাকে সতর্ক হতে হবে।

সন্দেহ সঠিক না হলে

আপনার সন্দেহ যদি সঠিক না হয়ে তাহলে স্বামীর কাছে অবশ্যই ভুল স্বীকার করবেন। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন অতিরিক্ত ভালোবাসা থেকেই এটি হয়েছে। কোনো আত্মীয়স্বজনের কাছে ভুল করেও এসব শেয়ার করবেন না। নিজস্ব জগৎ তৈরি করুন; যা আপনার একঘেয়েমি কাটিয়ে আপনার সুস্থ এবং সুন্দরভাবে বাঁচার সহায়ক হবে। স্বামীর প্রতি অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা তার জন্য বিরক্তির কারণ হতে পারে। তাকে স্বাধীনতা দিন। তবেই আপনাদের সম্পর্ক উপভোগ্য হয়ে উঠবে। সম্পর্কের মধ্যে বন্ধুত্ব ফিরিয়ে আনুন।

শেষকথা

আপনার স্বামী দ্বিতীয় কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে থাকলে এটি আপনার জন্য অবশ্যই দুশ্চিন্তার কারণ। কিন্তু তাই বলে তো আপনার জীবন, আপনার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়নি। আপনি চাইলে আপনার স্বামীকে একটা সুযোগ দিতে পারেন অথবা এ সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসতে পারেন। আপনার জীবন নিয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার আপনার আছে। সমাজ আপনাকে কী বলবে বা না বলবে সেটা নিয়ে ভাবলে চলবে না। কারণ আপনি আপনার স্বামীর প্রতি সৎ ছিলেন; কিন্তু তিনিই আপনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। নিজেকে পরিবর্তন করুন। আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হোন। চাইলে কোনো কাজের মাঝে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারেন। তাহলে খুব একঘেয়েমি লাগবে না। নতুন কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়াবেন কিনা সেটা সম্পূর্ণ আপনার ব্যাপার।

 

নতুন সম্পর্কে জড়ালে তার পরিণতি যে আগের মতোই হবে এমন ভাবনাকে প্রশ্রয় দেবেন না। নতুন সম্পর্ক নিয়ে পজিটিভলি ভাবুন। নতুন মানুষটিকে আপনার জীবনের সব ঘটনা খুলে বলুন। তাহলে আপনার প্রতি তার বিশ্বাস তৈরি হবে এবং নতুনভাবে জীবন শুরু করতে কোনো অসিুবধা হবে না। আপনার ভবিষ্যৎ জীবন সুন্দর করার দায়িত্ব সম্পূর্ণ আপনার নিজের।

আপনার করণীয়

আপনার সন্দেহ সঠিক কিনা প্রথমেই তা নিশ্চিত হোন। আপনার সন্দেহের পেছনে কোনো প্রমাণ থাকলে তা জড়ো করে রাখুন। আপনার সন্দেহের ক্ষেত্রগুলো নোট করে রাখুন। আপনার স্বামী যখন ফ্রি থাকবেন তখন তার সঙ্গে বসে খোলাখুলি আলোচনা করুন। আপনি আপনার সন্দেহের কারণ এবং যুক্তিগুলোকে তার কাছে উপস্থাপন করুন। তার উত্তরগুলোও মনোযোগ দিয়ে শুনুন। এসময় আপনি কোনোভাবেই উত্তেজিত হবেন না বা চিৎকার-চেঁচামিচি করবেন না। সন্তানের সামনে এসব বিষয় কখনোই তুলবেন না। যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অবশ্যই নিজের সন্তানের কথা ভাবুন।

 

Related posts