শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম। ১৬ জুলাই ২০১৬
মোঃ আল আমিন, মাধবদী (নরসিংদী) থেকে :
ড্রাইভার–হেলপার ও তাদের সন্ত্রাসী দোসরদের হাতে নিহত হাতিরদিয়া শাহবুদ্দিন মেমোরিয়াল একাডেমীর মেধাবী ছাত্র জিসানকে গতকাল শুক্রবার সকাল ১০ টায় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। স্থানীয় বাসোয়ার কান্দা ঈদগাহে অনুষ্ঠিত নামাজে জানাজায় শিবপুর উজেলা চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম মৃধা, শুকুন্দী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গনি ফরাজীসহ শাহাবুদ্দিন মেমোরিয়াল একাডেমীর ছাত্র–শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকার হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত ১০ টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে জিসানের লাশ গ্রামের বাড়ী বাসুয়ারকান্দা গ্রামে পৌছলে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। জিসানের পিতামাতা আত্মীয়স্বজনের আহাজারীতে গ্রামের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে। জিসানের পিতা–মাতার বুক চাপরানো কান্না উপস্থিত শত শত মানুষের চোখ অশ্র“সজল হয়ে উঠে। এদিকে শুক্রবার সকাল ১০ টায় জিসানের লাশ দাফন করার পর জিসান হত্যাকারীদের বিচারের দাবীতে এলাকার মানুষ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে। এ মানববন্ধন কর্মসূচীতে নেতৃত্ব দিয়েছেন স্থানীয় শুকুন্দী ইউনিয়নের নব–নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাদিকুল ইসলাম শামীম এবং দৈনিক ইনকিলাবের সহ–সম্পাদক একলাছুল হক। ঢাকা–কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের নারান্দী বাসস্ট্যান্ডে প্রায় এক কিলোমিটার লম্বা এই মানববন্ধনে শত শত মানুষ স্বত:স্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করে।
মানববন্ধন চলাকালে শিবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ার্যান মো. আরিফুল ইসলাম মৃধা, শুকুন্দী ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল গণি ফরাজী, একদুয়ারিয়া ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আনিছুজ্জামান মিটুল, উপজেলা আ’লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মো. বজলুল হক বজলু, যুবলীগের আহবায়ক এমএস ইকবাল আহমেদ, শুকুন্দী ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক কামাল, শাহাবুদ্দিন মেমোরিয়াল একাডেমীর প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম, শুকুন্দী নাজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়েল প্রধান শিক্ষক মো. আবুল হাশেম ভূঞা, ছোট শুকুন্দী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসা: আমেনা পারভীন প্রমুখ।
শিবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আরিফুল ইসলাম মৃধা বলেন, জিসান হত্যাকারীরা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী বলে জানতে পেরেছি। এ গ্র“পটি এপাচি সন্ত্রাসী গ্র“প হিসেবে পরিচিত। তিনি জিসানের হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবী জানান।
শুকুন্দী ইউনিয়নের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. সাদিকুর রহমান শামীম, জিসান হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবী জানিয়ে বলেন, ‘জিসানের হত্যা কারীরা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমরা খুনীদের ফাঁসির দাবী জানাই।’
নিহত জিসানের বড় ভাই সেনা সদস্য ঝিনুক বলেন, যারা আমার নিরীহ ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবী জানাচ্ছি। নিহত যাতে ভবিষ্যতে জিসানের মতো আর কাউকে অকাল মৃত্যুর নির্মম শিকারে পরিণত না হতে হয়।
উল্লেখ্য, নিহত জিসান মনোহরদী উপজেলার শুকুন্দী গ্রামের মস্তফা কামাল ও শেলিনা বেগমের পুত্র। সে হাতিরদিয়ার শাহাবুদ্দিন মেমোরিয়াল একাডেমীর অষ্টম শ্রেণীতে লেখাপড়া করতো। ঈদের দিন জিসান তার বন্ধু রায়হান, কাইয়ূম, রিফাত ও সোহরাবকে নিয়ে আনন্দ করে ভৈরব ব্রীজ দেখার জন্য বাসযোগে ভৈরব যায়। সেখান থেকে পূনরায় শিবপুরের ইটাখোলার মোড়ে এসে মনোহরদীগামী একটি বাস দেখে ড্রাইভার–হেলপারদেরকে জিজ্ঞাস করে বাসটি মনোহরদী যাবে কিনা। ড্রাইভার–হেলপার মনোহরদী যাবে বলে জানালে জিসান ও তার বন্ধুরা বাসে উঠে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। কিন্তু সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বাসটি শিবপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে আর সামনে যাবে না বলে জানায়। এতে বাস যাত্রীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। যাত্রীরা বাসের ড্রাইভার–হেলপারদের সাথে বাগবিতন্ডায় লিপ্ত হয়। এসময় অবস্থার বেগতিক দেখে ড্রাইভার বাসটি নিয়ে মনোহরদীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে বাধ্য হয়। এরই মধ্যে ড্রাইভার ও হেলপাররা তাদের এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীদেরকে মোবাইল ফোনে জানায় যে যাত্রীরা তাদের সাথে খারাপ আচরণ করেছে। এখবর শুনে এলাকার সন্ত্রাসীরা সামনের স্টেশনের উৎপেতে বসে থাকে। বাসটি সোনাকুড়া সিএএন্ডবি বাসস্ট্যান্ডে পৌছার সাথে সাথেই ড্রাইভার হেলপারের মজুদ করে রাখা সন্ত্রাসীরা বাসযাত্রীদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। স্থানীয় মোহরপাড়া গ্রামের কাজল মিয়ার ছেলে রবিন, রুহুল আমিনের দুই ছেলে হাবিবুল্লা ও মেহেদী, নুরুল ইসলামের ছেলে শাকিল ও দোপাত্বর গ্রামের হাসেমের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যাত্রীদেরকে মারধোর করতে থাকলে জিসানের বন্ধুসহ অন্যান্য যাত্রীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা তখন নিরীহ জিসানকে আটক করে তার উপর অমানবিক শারীরিক নির্যাতন চালায়। তারা লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে জিসানের মাথা থেতলে দেয়। এরপর আমগাছের ডাল দিয়ে পিটিয়ে তার সারা শরীর তুলোধুনা করে ফেলে। পরে তারা অন্যান্য লাঠিসোটা দিয়ে পিটিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষত বিক্ষত করে দেয়। পরে তাকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দীর্ঘ ৭ দিন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অজ্ঞান থাকার পর গত বৃহস্পতিবার সকালে তার মৃত্যু ঘটে।