শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম। ১৫ জুন ২০১৬
আষাঢ়-শ্রাবণের ঋতু বর্ষাকে স্বাগত জানাতে এরই মধ্যে কদম ফুল নিয়ে অপেক্ষা করছে প্রকৃতি। ঋতুচক্রের আবর্তণে কদম ফুল ফুটে জানান দিয়েছে আষাঢ়ের আগমনবার্তা। জ্যৈষ্ঠের দাবদাহে তপ্ত দেহমন নিয়ে দিনটির জন্য প্রতীক্ষায় বাঙালির হৃদয়। আনন্দ-স্পর্শ-আশা জাগানিয়া আষাঢ়- তোমায় স্বাগতম।
গ্রীষ্মের তাপদাহে শুষ্ক মাটিকে ভিজিয়ে দেয় আষাঢ়ের বৃষ্টি- শ্রাবণের বর্ষণ কোমল করে মাটিকে। বীজ থেকে সুপ্ত অঙ্কুর মাথা তোলে সেই নরম মাটি ভেদ করে। সতেজ হয়ে ওঠে গাছের মলিন পাতা। গাঢ় সবুজে ভরে ওঠে তরুপল্লব। বুনো উচ্ছ্বাসে বেড়ে ওঠে লতাগুল্ম। দেশের কৃষিপ্রধান অর্থনীতিতে এই বৃষ্টি রেখে চলেছে সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক ভূমিকা।
বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় বর্ষা ঋতু নিয়ে রয়েছে উচ্ছ্বসিত বন্দনা, অনুরাগ ও স্তুতি। রহস্যময়ী এ বর্ষার রূপ, বৈচিত্র্য, চমক, বর্ণচ্ছটা এবং আকাশ- প্রকৃতির গভীর মিতালী শিল্প-সাহিত্যের সরস উপকরণ হিসেবে আবহমানকাল থেকেই অনুপ্রাণিত ও স্পন্দিত করে আসছে শিল্পী, কবি ও সাহিত্যিকদের।
বর্ষা ছিল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি প্রিয় ঋতু। তাই তার বিভিন্ন গানে উঠে এসেছে মেঘ-মেদুর বর্ষার রূপ ঐশ্বর্যের শিল্পিত বর্ণনা। তিনি লিখেছেন- ‘বজ্র মানিক দিয়ে গাঁথা, আষাঢ় তোমার মালা। তোমার শ্যামল শোভা বুকে বিদ্যুতেরই জ্বালা। তোমার মন্ত্রবলে পাষাণ গলে, ফসল ফলে। মরু বহে আনে তোমার পায়ে ফলের ডালা …’ অথবা ‘বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর, আউশের ক্ষেত জলে ভরভর, কালি-মাখা মেঘে ওপারে আঁধার ঘনিয়েছে দেখ চাহি রে। ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে…’। বিশ্বকবির এই শাশ্বত পঙক্তি যুগলের ছন্দের মতো ঝরঝর বর্ষণ কাল হবে কি-না কারও জানা নেই। তবে কবির এমনই আহবানের মতো দেশবাসীরও আশা, বর্ষার আগমনে তাপিত গ্রীষ্মের দীর্ঘ অধ্যায়ের অবসান হবে। দাবদাহে হাঁসফাঁস হয়ে ওঠা মানুষগুলো স্বস্তি পাবে। জলভরা মেঘের আষাঢ় এসে যবনিকা টেনে দেবে বহমান দীর্ঘ তাপদহনের জ্বালা- যন্ত্রনার অধ্যায়ের, অর্থাৎ গ্রীষ্মের। বর্ষার আগমনে দাবদাহে কাহিল মানবকুলের সঙ্গে মুক্তি পাবে প্রকৃতি এবং উদ্ভিদরাজিও। শান্তি, স্বস্তি ও জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে পেতে তাই মানুষ ও প্রকৃতি উভয়ের মধ্যেই চলছে একে বরণ করে নেয়ার নানা আয়োজন।
বর্ষাঋতু এই দেশের প্রকৃতিকে বদলে দেয় নানারূপে, নানা চিত্রধারায়। নদ-নদীতে বাড়তে থাকে জলের ধারা। খাল-বিলে ফিরে আসে চিরচেনা রূপের বহর। মৌসুমী বায়ুর বহতায় প্রকৃতির অন্তর জুড়িয়ে দেয় শীতল বাতাস আর বৃষ্টিমাখা বায়ুস্তর। প্রাণান্ত শান্তির পরশ ফিরে আসে সামাজিক জীবনে। এছাড়া কেতকীর মনমাতানো সুগন্ধ, কদমফুলের চোখ জুড়ানো শোভা ও পেখম খোলা ময়ূরের উচ্ছ্বল নৃত্যের আবাহন থাকে এই আষাঢ়েই। তাই প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ আষাঢ়কে বলেছেন- ‘ধ্যানমগ্ন বাউল- সুখের বাঁশি’।
কাব্যলক্ষ্মীর সাধনায় যাদের আগ্রহ কম, তাদের অনেকের কাছেই বর্ষা ভোগান্তিরও বটে। কেননা আষাঢ় মানেই বৃষ্টির ঘনঘটা। বৃষ্টির তোড়ে যাওয়া যায় না ঘরের বাইরে। বিশেষ করে নগরের রাস্তায় বের হওয়া অনেক সময়ই নিয়ে আসে চরম দুর্ভোগ কমে যায় দিন-মজুরের আয়-উপার্জন। গ্রামাঞ্চলেও অনেক সময়ে কাজের ব্যাঘাত ঘটে। বর্ষার ঢল অনেক সময়ে বন্যারও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তারপরও বর্ষা নিয়ে যে যাই বলুক বা ঘটুক, বর্ষা যে বাঙালির মনন জুড়ে এক ভিন্নমাত্রা যোগকারী ঋতু সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই।