আজ ১১৭তম জন্মবার্ষিকী কাজী নজরুল ইসলামের

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম। ২৫  মে  ২০১৬

কাজী নজরুল ইসলামের

কাজী নজরুল ইসলামের

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১১৭ বছর আগে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের (বাংলা ১৩০৬ সনের ১১ জ্যৈষ্ঠ) এই দিনে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা সাহিত্য ও গানে তিনি নিজস্ব মনস্বীতায় সৃষ্টি করেন সম্পূর্ণ নতুন এক ধারা। প্রান্তিক ও নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর স্বপ্ন, বিপ্লব, প্রেম ও দ্রোহ প্রকাশে তিনি ব্যবহার করেছেন অভিনব তেজস্বী এক ভাষা, যা আগে ছিল বিরল। অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে শুধু সাহিত্যে নয়, ব্যক্তিজীবনেও তিনি আপসহীন লড়াই করে গেছেন। তার অনমনীয় সংগ্রামের জন্যই তাকে ‘বিদ্রোহী’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৯২৯ সালের ১০ ডিসেম্বর কলকাতার অ্যালবার্ট হলে বাঙালিদের পক্ষ থেকে কাজী নজরুল ইসলামকে দেয়া এক সংবর্ধনায় নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু বলেছিলেন, ‘আমরা যখন যুদ্ধে যাব, তখন সেখানে নজরুলের যুদ্ধের গান গাওয়া হবে। আমরা যখন কারাগারে যাব, তখনো তার গান গাইব।’ দুই বাংলায়ই তিনি সমান জনপ্রিয় ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দ্রোহের উত্স।

পিতাকে হারিয়ে প্রবল দারিদ্র্যের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে যায় ছেলেবেলায়ই। জীবনের তাগিদে তিনি কবি দলে, রুটির দোকানে এমনকি খানসামা হিসেবেও কাজ করেন। পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তিনি মাত্র নয় বছর বয়সে মুয়াজ্জিনের কাজ নেন। যোগ দেন লেটোগানের দলে। লেটোগান হলো সংগীত ও নৃত্যের সংমিশ্রণে এক ধরনের লোকনাট্য। এখানে তিনি পরিচিত হন বাংলার লৌকিক পুরাণ, উপকথা ও নানা হিন্দু উপাখ্যানের সঙ্গে। ফলে ছোটবেলা থেকেই তার মননজগতে ইসলাম, হিন্দু ও বাংলার লোকাচারের এক সংমিশ্রণ ঘটে, যা তাকে ভবিষ্যতে অসাম্প্রদায়িক বিপ্লবী মানুষে পরিণত করে। কিন্তু তার এ অসাম্প্রদায়িক দর্শন ও লেখার জন্য সে সময়ই তাকে মৌলবাদীদের রোষানলে পড়তে হয়। তিনি যে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদের আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন, সেই সাম্প্রদায়িকতা আজো বাংলাদেশে বর্তমান। ফলে তার মৃত্যুর ৪০ বছর পরও বর্তমানে বাংলাদেশে নব্য সাম্প্রদায়িকতার উত্থানের এ সময়েও সব ধরনের গোড়ামি ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তার লড়াই এবং রচনা খুবই প্রাসঙ্গিক।

কবি ১৯১৭ সালের শেষ দিকে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছিলেন। সেনানিবাসে থাকাকালীন অবস্থায়ই তিনি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখা ছাপাতে থাকেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯২০ সালে দেশে প্রত্যাগমন করে তিনি পুরো সাহিত্যিক জীবন শুরু করেন। ১৯২১ সালে নজরুল ইসলাম ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ও ‘ভাঙ্গার গান’ রচনা করেন, যা তাকে বিপুল জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি এনে দেয়। ১৯৪২ সালের জুলাইয়ে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কবিতা, গান ও অন্যান্য সৃষ্টিকর্মের মধ্য দিয়ে তিনি সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদ ও শ্রেণীবৈষম্যের বিরুদ্ধে অবিচল লড়াই করে গেছেন। তার লেখার জন্য তাকে কারাবাস পর্যন্ত করতে হয়।  ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবিকে সপরিবারে বাংলাদেশে আনা হয়। ১৯৭৬ সালে কবিকে বাংলাদেশ সরকার নাগরিকত্ব প্রদান করে এবং একুশে পদকে ভূষিত করে। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট কবি ঢাকার পিজি হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বাংলাদেশের রণসংগীতের রচয়িতা জাতীয় কবি নজরুল ইসলামকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের উত্তর পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।

 

Related posts