অর্থমন্ত্রীকে বিচারের আওতায় আনতে হবে: ইমরান

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম।  ১৮  মার্চ  ২০১৬

অর্থমন্ত্রীকে বিচারের আওতায় আনতে হবে: ইমরান

ইমরান

বাংলাদেশের জনগণের কষ্টার্জিত হাজার হাজার কোটি টাকা রিজার্ভ জালিয়াতির প্রতিবাদে শাহবাগে “নাগরিক সমাবেশ” করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। বক্তব্যে তিনি বলেন, “রিজার্ভ থেকে যে ৮০০ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে, তা কীভাবে ফেরত আনা যায় আর দোষীদের শাস্তি দেয়া যায়, সেদিকে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। এখান থেকে অর্থ লুট হওয়া বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উপর একটি চূড়ান্ত আক্রমণ। যখন একের পর আর্থিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে, সেই ধ্বংসকারীদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি। তারা তাই মনে করেছে তারা যা খুশি তাই করতে পারে, কেউ তাদের বিন্দুমাত্র বাধা দেবে না। রাষ্ট্রের ধ্বংসাত্মক ঔদাসীন্যের ফলেই সর্বশেষ তারা বাংলাদেশ ব্যাংকে হাত দেয়ার সাহস পেয়েছে। কাজেই আমাদের খুঁজে বের করতে হবে এই লুটপাটের পেছনে কারা এবং কোন কোন মহল লুটপাটকারীদের আশ্রয় প্রশ্রয় যোগাচ্ছে।

এই লুটের বিচার করতে গেলে, বিগত ৭ বছরে বাংলাদেশের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের যিনি মূল প্রশ্রয়দাতা, বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী,তাকে আগে বিচারের আওতায় আনতে হবে। কীসের ভিত্তিতে তিনি হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের পর বলে যাচ্ছিলেন, “এই টাকা কিছুই না”, এটি আগে খুঁজে বের করতে হবে। যখনই বলা হয়েছে, ৪০০০ কোটি টাকা কিছু না, তখনই বাংলাদেশ ব্যাংক লোপাটের নীলনকশা শুরু হয়েছে”।

ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে অভিযোগ করে ইমরান এইচ সরকার বলেন, “আমরা দেখেছি হ্যাকিং এর নাম করে জনগণকে ধোঁয়াশায় ঘটনাকে ভিন্নখাতে নেয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু আজকে জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে পরিষ্কার হয়েছে, হ্যাক করে এই টাকা সরিয়ে নেয়া সম্ভব ছিল না। অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, পরপর ছয় জনের হাতের ছাপ নিশ্চিত হবার পরেই ফেডারেল রিজার্ভ টাকা প্রদান করে। তারপরে আমরা কী দেখলাম, এই লুটপাটের ঘটনায় জড়িত থাকায় ফিলিপাইনের কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, অথচ আমাদের দেশে কিভাবে অপরাধীদের না ধরে ঘটনা ধামাচাপা দেয়া যায় সেই চেষ্টা চালানো হয়েছে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে গভর্নরকে পদত্যাগে বাধ্য করে এমন একজনকে গভর্নর করা হয়েছে যাকে “ধামাচাপা গভর্নর” বলা যেতে পারে। সোনালি ব্যাংকের অর্থ লুট হবার পর তাকে চেয়ারম্যান করে সে ই ঘটনা ধামাচাপা দেয়া হয়েছিল, এবারো সম্ভবত এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে তাকেই যোগ্যতম ভাবা হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে একের পর এক লুটপাট করা হয়েছে, আর একেকটি ঘটনা দিয়ে এসব ধামাচাপা দেয়া হয়েছে, আর আমরা বোকা জনগণ নতুন নতুন ঘটনার গোলকধাঁধাঁয় পড়ে সেসব ভুলে গেছি”।

তিনি আরো বলেন, “রিজার্ভের যে ২৮ বিলিয়ন ডলার নিয়ে এত গর্ব, এত বাহাদুরি, সেই টাকা, এদেশের জনগণের কষ্টের টাকা, প্রবাসীদের কষ্টের টাকা। এই ২৮ মিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ বাংলাদেশের মানুষের রক্তঘামে তিল তিল করে গড়ে তোলা এক স্বপ্ন। বাংলাদেশ ব্যাংক লুট হওয়া মানে দেশের ১৬ কোটি মানুষের স্বপ্ন লুট হওয়া। আমাদেরকে জেগে উঠতে হবে, যাতে আমাদের নিত্যনতুন ঘটনা দিয়ে ভুলিয়ে, ব্যস্ত রেখে কেউ আমাদের দেশ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করতে না পারে।

আমাদের শাসকেরা প্রশ্রয় দিতে দিতে ছিঁচকে চোরদের ডাকাত বানাচ্ছে, লুটেরাদের পিঠ চাপড়ে দিয়ে উৎসাহিত করছে। অর্থমন্ত্রীর যদি ন্যূনতম দায়বদ্ধতা থেকে থাকে, তার পদত্যাগ করা উচিত, যদিও তার কাছ থেকে দায়বদ্ধতার দুরাশা আমি করি না। দুই দেশের নাগরিকদের দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকার কথা না”।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র বলেন, “আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাই, দ্রুততম সময়ে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। এই লুটেরাই ১৯৭৫ এর ২৬ শে মার্চ দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পর জাতির জনককে হত্যা করেছিল। আমাদের আশঙ্কা এই লুটপাটকারীদের হাত অনেক লম্বা। আপনি সতর্কতা অবলম্বন করে এখনই ব্যবস্থা না নিলে এরা জাতির জনকের মতো আপনার বিরুদ্ধেও কোনো ভয়াল ষড়যন্ত্র করতে পেছপা হবে না। একইসাথে দাবি জানাই, এই ব্যর্থ অর্থমন্ত্রী যিনি ইতোমধ্যেই লুটেরাদের পক্ষ নিয়েছেন তাকে সরিয়ে যোগ্য কাউকে দায়িত্ব দিন। এই লুটপাটকারীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন নতুবা আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলাকে এরা শ্মশান বানিয়ে ছাড়বে”।

 

Related posts