সম্প্রতি বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন ২০১৬-এর চূড়ান্ত অনুমোদন

শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ৩  ডিসেম্বর  ২০১৬

সম্প্রতি বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন ২০১৬-এর চূড়ান্ত অনুমোদন

সম্প্রতি বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন ২০১৬-এর চূড়ান্ত অনুমোদন

সম্প্রতি বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন ২০১৬-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত এ খসড়াটি সংসদে পাস হলেই আইনে পরিণত হবে। তাই বিশেষ বিধানযুক্ত এই আইনে শিথিলতা না আনতে বাংলাদেশের সংসদ সদস্যদের (এমপি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

এইচআরডব্লিউ বলছে, বাংলাদেশের মন্ত্রিসভার অনুমোদন পাওয়া ওই আইন পাস হলে তা মেয়েদের আরো বেশি বাল্যবিয়ের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেবে। রাজনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে ওই বিল বাতিল করা বাংলাদেশের সংসদ সদস্যদের একান্ত দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেন হেদার বার।

বৃহস্পতিবার সংস্থাটির নারী অধিকার বিভাগের সিনিয়র গবেষক হেদার বার এ আহ্বান জানান। ১৮ বছর বয়সের কমে মেয়েদের বিয়ের বিশেষ সুযোগ রেখে প্রণীত এ আইন পাস না করাতে এমপিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তার আহ্বানটি এইচআরডব্লিউর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

অনুমোদিত ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন’-এর খসড়ায় ছেলেদের বিয়ের বয়স ২১ ও মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর রাখা হয়। এখন সংসদে পাস হওয়ার পর এটি আইনে পরিণত হবে। এ আইনে বিশেষ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি এবং বাবা-মায়ের সম্মতিতে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদেরও বিয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে।

এইচআরডব্লিউর এ আহ্বান বার্তায় উল্লেখ করা হয়, বিশ্বের বাল্যবিবাহপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ ছাড়া এশিয়ায় শীর্ষে অবস্থান করছে। দেশটিতে ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই ৫২ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। এমনকি বয়স ১৫ হওয়ার আগেই বিয়ে হয় ১৮ শতাংশ মেয়ের। বাল্যবিবাহ ওই মেয়ে ও তাদের পরিবারের জন্য গভীর সংকট ডেকে আনে। এর ফলে মেয়েরা স্কুল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়, আটকে যায় দারিদ্র্যের বেড়াজালে। ঝুঁকি থাকে গৃহবিবাদের। অল্প বয়সে সন্তান জন্মদানের ফলে তার ও নবজাতকের স্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।

এ আইন পাসের উদ্যোগের জন্য বাংলাদেশ সরকারের সমালোচনা করে হিদার বার বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের কম বয়সীদের বিয়ে বন্ধে একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালে দেয়া ওই প্রতিশ্রুতিতে তিনি আরো বলেছিলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সীদের বিবাহ বন্ধ করা হবে। এরপর দু’বছর পার হলেও এ বিষয়ে কোনো কর্মপরিকল্পনা হয়নি।

খসড়া আইনে বাল্যবিবাহ বন্ধে ‘কঠোর’ শাস্তির কথা বলা হলেও অপ্রাপ্তবয়স্করা বিয়ে করলে সর্বোচ্চ ১৫ দিনের আটকাদেশ বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার বিধানকে যথেষ্ট বলে মনে করছে না এইচআরডব্লিউ। হিদার বার জানান, এ আইন পাস হলে ওই ১৫ দিনের আটকাদেশের মধ্য দিয়েই কিছু বাল্যবিয়ে বৈধতা পেয়ে যাবে, যা বর্তমান আইনের চেয়েও বড় দুর্বলতা তৈরি করবে।

তিনি আরো বলেন, ‘আইন শিথিল করা হলে বাল্যবিয়ে বন্ধের লড়াইয়ের পথে তা হবে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। এ আইন সারা দেশে অভিভাবকদের এ বার্তা দেবে যে, অন্তত কিছু ক্ষেত্রে সরকার বাল্যবিয়েকে যৌক্তিক মনে করছে।’

এ বিধান যুক্ত করায় সরকারের যুক্তিতে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে ‘অবৈধ প্রেগন্যান্ট’ হওয়ার জটিলতা রয়েছে। সরকারের এ যুক্তিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে এইচআরডব্লিউ বলেছে, এ থেকে মনে হচ্ছে, ধর্ষণের কারণে কোনো মেয়ে গর্ভবতী হলে তাকেও ওই আইন দেখিয়ে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়েতে বাধ্য করা হতে পারে।

 

Related posts