শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম। ৪ জুন ২০১৬
ইরানের চাবাহার বন্দরের মতো বাংলাদেশেও একটি বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা করছে ভারত। ইতোমধ্যেই জাহাজ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিনিধিদল ঢাকা ঘুরে এসেছে। গতকাল এ কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ি।
মুম্বাই থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এখনই কোন বন্দর নিয়ে আলোচনা চলছে তা বলছি না। তবে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য বাড়াতে নয়াদিল্লি একটি বন্দর নির্মাণ ও পরিকাঠামো নির্মাণ করতে চায়। এ নিয়ে কথাবার্তাও এগোচ্ছে।’
ইরানের চাবাহার বন্দর নির্মাণের চুক্তি সই হওয়ার পর ভারতের ল্য এখন বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারেও একইভাবে বন্দর তৈরি করা। বন্দরগুলো আপাতভাবে বাণিজ্যিক বন্দর হলেও প্রয়োজনে এখানে তল্লাটে দেশের কৌশলগত অবস্থান পোক্ত করতেও কাজে লাগানো যেতে পারে। বাংলাদেশের মংলা এবং মিয়ানমারের সিতওয়ে বন্দরে বিশাল পরিমাণ ভারতীয় বিনিয়োগ নিয়ে অনেক দিন ধরেই চর্চা চলছে। কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রী অবশ্য আলোচনার কথা মেনে নিলেও কোন বন্দরটি ভারত উন্নয়ন করবে তা খোলাসা করেননি।
তবে চাবাহারের বাণিজ্যিক লাভের কথা ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। নীতিন জানান, ইরানের চাবাহার বন্দরের কাছেই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হচ্ছে। সেখানে নালকো কারখানা স্থাপন করবে। ইরান মাত্র ২ মার্কিন ডলারে প্রতি ইউনিট গ্যাস ভারততে দিতে সম্মত হয়েছে। সস্তায় গ্যাস পাওয়া গেলে সেখানেই নালকোর মতো সংস্থা ইউরিয়া তৈরি করবে। সেই ইউরিয়া গুজরাটের কান্ডলা বন্দরে আনা হবে। এর ফলে সারে ভতুর্কি ৪৫ হাজার কোটি টাকা ভারত সাশ্রয় করতে পারবে বলে গডকড়ি দাবি করেছেন।
গডকড়ি বলেন, ‘চাবাহার থেকে কান্ডলা বন্দরের সমুদ্রপথে দূরত্ব মাত্র ৮০০ মাইল। ফলে চাবাহার থেকে পারস্য উপসাগর দিয়ে ভারত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বহুগুণ বাড়িয়ে নিতে পারবে। আফগানিস্তানে পৌঁছাতে পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে আর যেতে হবে না। মধ্য এশিয়ার দেশগুলোও আমাদের আরো কাছে চলে আসবে।’
বন্দর বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, বাংলাদেশেও সস্তায় গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। সে দেশেও বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ছে ভারতীয় সংস্থা। এর সাথে বন্দর নির্মাণ করতে পারলে ভারতীয় সংস্থাগুলো আরো বেশি বাণিজ্য করতে পারবে।
কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রী সেই সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছেন। তিনি জানান, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বছরে ৬০০০ মিলিয়ন টন পণ্য সড়ক পথে যাতায়াত করে। সেই পণ্য যাতে নদী ও সমুদ্র পথে নিয়ে যাওয়া যায় সেই ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। কলকাতা, হলদিয়া এবং সাগর বন্দর থেকে বাংলাদেশের সাথে সরাসরি বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি হবে।
সেই সূত্রেই গডকড়ি বলেন, ‘সাগর বন্দরে ১৪.৫ মিটার পর্যন্ত নাব্যতা মিলতে পারে। এ বন্দরে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর রেল-রোড সেতুটি জাতীয় সড়ক উন্নয়ন কর্তৃপ তৈরি করবে। বন্দর নির্মাণের খরচ রাজ্য, কেন্দ্র এবং বেসরকারি সংস্থার সাহায্যে তোলা হবে হবে।’
বন্দর কর্তাদের বক্তব্য, ভারত বাংলাদেশে কোনো বন্দর তৈরি করলে তার সুবিধা সরাসরি এ রাজ্য পাবে। কলকাতা-হলদিয়া বন্দরের কারবার বহুলাংশে বাড়বে। শুধু বাণিজ্যক সুবিধাই নয়, বাংলাদেশ বা মিয়ানমারের কোনো বন্দরের ভারতের উপস্থিতি দণি এশিয়ায় ভারতের কৌশলগত অবস্থানও দৃড় করবে বলে মনে করেন প্রতিরা বিশেষজ্ঞরাও।