শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম। ১৬ মার্চ ২০১৬
প্র্যাকটিস সেশনে ব্যাট পরীক্ষা করছেন সাকিব, পাশে তামিম ও মাশরাফি :
টি-২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল অনভ্যস্ত। অনেক দিন থেকেই কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান দলের বাইরে। দলে হাল ধরার যোগ্য নির্দেশক সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহীমসহ কয়েকজন খেলোয়াড় ফর্মে নেই। ধর্মশালায় বৈরী আবহাওয়ার সাথে লড়াই। বাছাই পর্বের মাঝপথে তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানির বোলিং অ্যাকশনে সন্দেহ। বেশ কিছু বাধা পেরিয়ে টাইগারেরা যোগ্যতার মাপকাঠিতেই টি-২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের মূল পর্বের টিকিট কাটতে সক্ষম হয়। আর এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের উদ্যম আকাক্সায়। যেখানে পুরো দলটিই বিশ্বাস করতে শিখেছে কারো ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের ঘাটতি হলেও যেন পুরো দল একাট্টা হয়ে সেটি পুষিয়ে নিতে পারে। আর কাণ্ডারি হিসেবে যে নামটি প্রথমেই আসে, সেটি হলো মাশরাফি বিন মুর্তজা।
বৈশ্বিক আসরে প্রতিবারই নতুন চ্যাম্পিয়ন দেখাটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার। অথচ টি-২০ ক্রিকেট প্রতি আসরেই উপহার দিচ্ছে একটি করে নতুন চ্যাম্পিয়ন দল। এ পর্যন্ত টি-২০ বিশ্বকাপের পাঁচ আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে পাঁচটি নতুন দল। ক্রিকেটের এই সংপ্তিতম আসরে এখন পর্যন্ত কোনো দলই দুইবার শিরোপা জয়ের স্বাদ পায়নি। প্রথম আসরে ভারত, এরপর একে একে চ্যাম্পিয়নের কাতারে নাম লিখিয়েছে পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা। নতুন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার একটা রেওয়াজ অলিখিতভাবে দাঁড় করিয়েছে টি-২০ বিশ্বকাপ। সে হিসেবে এই জায়গাটিতে আশাবাদী হতেই পারে চিরদুর্ভাগা দণি আফ্রিকা। বৈশ্বিক আসরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হওয়ার কারণে তাদের নতুন নামকরণ হয়েছে ‘চোকার্স’। টি-২০ ক্রিকেটের কল্যাণে দায়মুক্তি হয়েছে ইংল্যান্ডের। এবার চোকার্সদের সুযোগ রয়েছে। ঐতিহাসিক দায় মুক্তির পাথেয় হতে পারে প্রোটিয়ারা।
সাথে সাথে ুদ্র একটি পরিসংখ্যানে বাংলাদেশ নামটিও থাকতে পারে চ্যাম্পিয়নের তালিকায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শেষ তিনটি টি-২০ বিশ্বকাপে আগের বারের স্বাগতিক দল জিতেছে। সে হিসেবে গতবার স্বাগতিক ছিল বাংলাদেশ। এই কারণে টাইগারদের শিরোপা আসতে পারে হাতের মুঠোয়। শুধু পরিসংখ্যান হিসাব করলে মাশরাফি বাহিনীকে ছোট করে দেখা হবে। পারফরম্যান্সের বিচারে এবারের আসরের কোনো দলই মাশরাফিদের খাটো করে দেখছে না। ইতোমধ্যে বাছাইপর্বে সেটি প্রমাণ করে দেখিয়েছে হাতুরাসিংহের শিষ্যরা। এ ছাড়া কয়েক দিন আগেই ঘরের মাঠে এশিয়া কাপে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে ফাইনালে জায়াগা করে নেয় মাশরাফির দল। সেই বিপিএল থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সেও স্কোয়াডের সদস্যরা ছিলেন উজ্জ্বল। দেশের বাইরে গিয়েও কয়েকজন কাঁপন ধরিয়েছেন বিপক্ষের শিবিরে।
অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফিকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। মনের জোর এতটাই বেশি যে, নিজের চোট তো ভুলে থাকেনই সাথে পুরো ড্রেসিংরুমের সদস্যের উজ্জীবিত করে রাখেন। সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর কয়েকটি ম্যাচে জ্বলে উঠতে না পারলেও তাদের গ্রেটনেস নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তামিমেরও খারাপ সময় গিয়েছে। সেই তামিম বিপিএল থেকে পিএসল, বাছাইপর্বে যা করে দেখাল। তাতে পুরো দলই মানসিকভাবে শতভাগ প্রস্তুত রয়েছে। সৌম্যর বাজে ফর্ম থাকলেও পুষিয়ে দিচ্ছেন সাব্বির-মাহমুদুল্লাহরা। মোস্তাফিজ না থাকলেও আছেন তাসকিন, আল আমিন, আবু হায়দার। মাশরাফি যেমনটি বলেছেন ওমানের ম্যাচের আগে, ‘অন্য এক বাংলাদেশকে দেখবে ওমান।’ বাস্তবে সেটিই হয়েছে।
ইতোমধ্যেই বাংলাদেশকে নিয়ে হিসাব-নিকাশ শুরু করে দিয়েছে প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হতে যাওয়া পাকিস্তান। প্রথম পর্বের পারফরম্যান্স দেখে আরো সূক্ষ্মভাবে অঙ্ক কষছে প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ভারত। নিরাপত্তার অজুহাতে বাংলাদেশে খেলতে না আসা অস্ট্রেলিয়াকেও মাঠে দেখে নেয়ার কড়া মনোভাব রয়েছে টাইগার শিবিরে। এবারের আসরে সুপার টেনের গ্রুপ ‘বি’ তে স্বাগতিক ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ।
সুপার টেনের লড়াইয়ে বাংলাদেশকে ‘আতঙ্ক’ হিসেবেই দেখছেন সাবেক অস্ট্রেলিয়া ওপেনার ম্যাথু হেইডেন। বাংলাদেশকে নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান দলটি টুর্নামেন্টের জন্য আতঙ্ক। ওদের উপমহাদেশের কন্ডিশনে খেলার অভিজ্ঞতা অনেক। সেই সঙ্গে ধারাবাহিক ফর্মেও রয়েছে। আর এই চেনা কন্ডিশনেই ভালো কিছু করে দেখানোর মতা রাখে বাংলাদেশ।’
চলতি মাসের শুরুতেই এশিয়া কাপ টি-২০তে বাংলাদেশের কাছে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় পাকিস্তান। সেই হারের ত না শুকাতেই আবার বাংলাদেশের সামনে তারা। কলকাতার ইডেন গার্ডেনে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ৩টায়। টি-২০ তে বাংলাদেশের বিপে শেষ দু’টি ম্যাচেই হেরেছে পাকিস্তান। হেরেছে শেষ তিনটি ওয়ানডেতেও। অর্থাৎ পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। এশিয়া কাপের আগে গত বছর এপ্রিলে মিরপুরে সিরিজের একমাত্র টি-২০তে পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে হারায় মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। ওই ম্যাচেই টি-২০ ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল ‘কাটারবয়’ মোস্তাফিজুর রহমানের। অভিষেকেই বাংলাদেশের পেসার তুলে নিয়েছিলেন শহীদ আফ্রিদি ও মোহাম্মদ হাফিজের মতো তারকা ব্যাটসম্যানের উইকেট।
দুই যুগ পর আজ আবার কলকাতার ইডেন গার্ডেনে খেলতে নামছে বাংলাদেশ। ১৯৯০ সালে এশিয়া কাপ ক্রিকেটে প্রথম ইডেনে খেলেছিল বাংলাদেশ। আইপিএলে খেলার সুবাদে সাকিব ইডেনে খেললেও দলের বাকিরা প্রথমবারের মতো ইডেনে খেলবেন। ২৫ বছর পর বাংলাদেশের ইডেনে ফেরার ম্যাচটি তাই জয় দিয়েই রাঙিয়ে রাখতে চাইবেন সাকিব-তামিম-মাশরাফিরা।