শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ১৭ অক্টোবর ২০১৬
ঢাকা-চট্টগ্রামে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট নির্মাণে বাংলাদেশকে গ্র্যান্ট লোন দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এরই মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম (আশুগঞ্জ) ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট করিডোর শিরোনামের এ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ(বিআইডব্লিউটিএ)।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক গণমাধ্যমকে জানিয়েছে আশুগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত এ নৌপথ সচল করা গেলে সংশ্লিষ্ট নদ-নদীগুলোর তীর ধরে অনেক শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠবে, যা সম্পৃক্ত অঞ্চলে উৎপাদনবলয় ও অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি করবে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, মেঘনা, শীতলক্ষ্যা, ডাকাতিয়া, কর্ণফুলী ও কীর্তনখোলা নদীর প্রায় ৯০০ কিলোমিটার নৌপথ সচল করা হবে। চারটি নৌবন্দর সংস্কার ও নির্মাণ করা হবে। দুটি কার্গো টার্মিনাল নতুন করে তৈরি করা হবে। ২৪ ঘণ্টা কার্গো চলাচল নিশ্চিত করতে বিভিন্ন জায়গায় গড়ে তোলা হবে অন্তত ছয়টি শেল্টার সেন্টার। বিআইডব্লিউটিএ জানিয়েছে, বিশ্বব্যাংক যে সহায়তা দিচ্ছে তা সহজ শর্তের ঋণ অনুদান। সুদহার হবে মাত্র শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ। পরিশোধের সময়সীমা ৩৫ বছর। প্রথম ১৫ বছর কোনো কিস্তি দিতে হবে না।
বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ প্রকল্পটি আমাদের অর্থনীতিতে গতির সঞ্চার করবে। এর মাধ্যমে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৯০০ কিলোমিটার নৌপথ সচল করা হবে।’ বর্তমানে আমাদের নৌপথের নাব্য কম থাকায় সবসময় কার্গো জাহাজ চলাচল করতে পারে না। অনেক সময় জোয়ারের অপেক্ষা করতে হয়। নৌপথে পণ্য পরিবহন ব্যয় কম হলেও এটি ব্যবসায়ীদের আগ্রহী করতে পারছে না। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সংশ্লিষ্ট নদ-নদীগুলোয় অন্তত ৪ মিটার গভীরতা ধরে রাখা হবে। এতে ২৪ ঘণ্টা কার্গো জাহাজ চলাচল করতে পারবে।’
বিশ্বব্যাংকের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল গত বছরের শেষ দিকে ঢাকা সফর করে ঢাকা-চট্টগ্রাম নৌপথ করিডোর গড়ে তুলতে সরকারের কাছে তাদের আগ্রহ তুলে ধরে। পরে এ বিষয়ে তারা একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়। ওই প্রস্তাবে সংস্থাটি বলেছে, বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার এ নৌপথ (করিডোর) কার্যকর করা গেলে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যয় অনেক কমে যাবে। অভ্যন্তরীণ পণ্য পরিবহনে গতি আসবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারত, নেপাল ও ভুটান বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধায় যে পণ্য পরিবহন করতে চাইছে, এ নৌপথ করিডোর সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নেও সহায়তা করবে।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে এগোচ্ছে সেভাবে অভ্যন্তরীণ কানেকটিভিটি এগোচ্ছে না। এর প্রধান কারণ, স্থলপথে যোগাযোগের জন্য যে পরিমাণ জমির প্রয়োজন তা পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে অর্থনীতির চালিকাশক্তিকে সচল রাখতে হলে সড়কনির্ভর যোগাযোগব্যবস্থা থেকে নৌপথে গুরুত্ব দিতে হবে বাংলাদেশকে।
এদিকে আজ সোমবার বাংলাদেশে সফরে এসে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম জানান, আগামীতে জলবায়ু খাতে বাংলাদেশকে আরও সহায়তা দেওয়া হবে। জিম ইয়ং কিম বলেন, বাংলাদেশ সরকার তার নাগরিকের পেছনে অর্থ ব্যয় করেছে। জন সম্পদ উন্নয়নে তারা অর্থ ব্যয় করছে। সে কারণেই দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিভাগগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের উন্নয়নে মুগ্ধ। তারা বেশ ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এর মূল কারণ এই দেশের সরকার তার জনগণের পেছনে বিনিয়োগ করেছে। জন সম্পদ উন্নয়নে হওয়া বিনিয়োগের ফল পাচ্ছে বাংলাদেশ।
দেশের প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বিশ্বের যে কোন শীর্ষ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। তবে এখন বাংলাদেশে যা করা হচ্ছে তা কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন।