শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ১০ ডিসেম্বর ২০১৬
দুর্যোগপরবর্তী সময়ে নগরীর ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ ও তথ্য সংগ্রহে ড্রোন ব্যবহার করবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। স্মার্ট নগরী গড়ার অংশ হিসেবে সাধারণের জন-নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি উদ্ধার কাজে গতি ও সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে এমন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে সংস্থার এ উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন কর্পোরেশনের সিস্টেম এনালিস্ট তৈমুর ইসলাম।
সম্প্রতি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভূমিকম্পসহ বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেশি দেখা যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকাতেও এ ধরনের দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞারা। এক্ষেত্রে ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে ঢাকা শহর ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হওয়ার হুঁশিয়ারি রয়েছে। সে জন্য এখন থেকেই দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্থাটি। কারিগরি সক্ষমতার পাশাপাশি জনদক্ষতা বৃদ্ধির কাজও করা হচ্ছে।
সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) আয়োজিত ‘ভূমিকম্প মোকাবিলা : আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক কর্মশালায় উপস্থাপিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা শহর বড় ধরনের ভূমিকম্পের কবলে পড়লে ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে মানুষ মারা যাবে। তার কয়েক গুণ মারা যাবে আগুনে পুড়ে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে। কারণ ভূমিকম্পের পর গ্যাসের লাইনের পাইপে বিস্ফোরণ ঘটবে। বিস্ফোরণের সেই আগুনেই পুরো নগর দাউ দাউ করে জ্বলবে।
এছাড়া ভূগর্ভস্থ পানি ও আশপাশের নদী-জলাশয়ের পানিতে নগরে বন্যার সৃষ্টি হবে। উপড়েপড়া বিদ্যুতের খুঁটির তারের সংস্পর্শে এসে পানিতে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে। সেই পানিতে পড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাবে মানুষ। ৮ দশমিক ৫ মাত্রার উপরে ভূমিকম্প হলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়বে। আশপাশের এলাকাগুলোতে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকায় তা ৯ তীব্রতার অনুভূত হবে। তাছাড়া ঢাকা শহরের ৬৫ ভাগ মাটি নরম। ভূমিকম্প হলে নরম মাটির ওপর কম্পনের স্থায়িত্ব বেশি হবে এবং ক্ষয়ক্ষতিও বেশি হবে।
এতে আরো বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের পর আধা ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধারকাজ শুরু করা গেলে ৯০ শতাংশ মানুষকে বাঁচানো যাবে। উদ্ধারকাজ শুরু করতে একদিন লাগলে ৮১ শতাংশ, দুদিন লাগলে ৩৬ শতাংশ এবং তিনদিন লাগলে ৩৩ শতাংশ মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে। উদ্ধারকাজ যত বেশি বিলম্ব হবে মৃতের সংখ্যা তত বেশি বাড়বে।
তৈমুর ইসলাম বলেন, বিশেষজ্ঞদের এমন আশঙ্কার ভিত্তিতেই মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন এমন উদ্যোগ নিতে চান। আগামী বছরের শুরু দিক থেকে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের আশা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দুর্যোগপরবর্তী সময়ে ড্রোন ব্যবহারের উদ্যোগ নিচ্ছি। এর মাধ্যমে বিপদকালীন নগরীর যেকোনো স্থানের ছবি ভিডিওসহ সংগ্রহ করা যাবে।’
তিনি জানান, ড্রোন পাঠিয়ে প্রথমে নগরীর প্রতিটি এলাকার ভিডিওসহ ছবি নেয়া হবে। এ নিয়ে নগর ভবনে একটি সেন্ট্রাল মনিটরিং সেল থাকবে। সেখানে ড্রোনের সংগ্রহ করা ছবি সংরক্ষিত থাকবে। সর্বেশেষ ছবি সংরক্ষণে রাখার জন্য ম্যাপ অনুযায়ী প্রতি মাসে অন্তত একবার করে ছবি সংগ্রহ করে রাখা হবে। এরপর দুর্যোগপরবর্তী সময়ে ওইসব স্থানে আবার ড্রোন পাঠিয়ে ছবি আনা হবে। এরপর ড্রোনই বলে দেবে কোনো এলাকার পরিস্থিতি কেমন। যে সমস্যা সমাধান করা যে সংস্থার দায়িত্ব সে সমস্যা সমাধান করতে সেন্ট্রাল মনিটরিং ডেস্ক থেকে সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয়া হবে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি) ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জন্য একটি প্রকল্পে ১৭৩ মিলিয়ন ডলার অর্থ দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। এর মধ্যে ডিএসসিসির জন্য বরাদ্দ ৯৫ মিলিয়ন ডলার। প্রকল্পটি একনেকের অনুমোদনও পেয়েছে। এই টাকা থেকেই ড্রোন কেনা হবে।