বাংলাদেশের টেস্ট জয়ে রচিত হল ইতিহাস


শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম ।  ৩০  অক্টোবর  ২০১৬

বাংলাদেশের টেস্ট জয়ে রচিত হল ইতিহাস

বাংলাদেশের টেস্ট জয়ে রচিত হল ইতিহাস



উৎসবের মঞ্চ চট্টগ্রামেই প্রস্তুত ছিল। কিন্তু হতে হতেও হয়নি। এবার ঠিকই হল। ইংলিশ সাম্রাজ্যের পতন হল ঢাকায়। সাদা পোশাকে ইতিহাস রচনা করল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডকে ১০৮ রানে হারিয়ে বাংলাদেশ প্রথমবারের মত টেস্ট ক্রিকেটে বড় দলকে হারাল।

বাংলাদেশের দেওয়া ২৭৩ রান তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ড অলআউট ১৬৪ রানে। অথচ উদ্বোধনী জুটিতে স্কোরবোর্ডে শতরান যোগ করেছিল ইংল্যান্ড। এরপরই ম্যাচের নাটাই বাংলাদেশের হাতে। মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসানের অসাধারণ বোলিংয়ে বিজয়ের কেতন উড়াল বাংলাদেশ।

টেস্ট ক্রিকেটে এটি বাংলাদেশের অষ্টম জয়। এর আগে জিম্বাবুয়েকে পাঁচবার ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দু'বার হারিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ‘দ্বিতীয় সারির' দলের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ। বলাবাহুল্য ১৬ বছরের ছোট্ট টেস্ট ক্যারিয়ারে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাফল্য। যদিও পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচ ড্র করেছিল বাংলাদেশ। পিছিয়ে রাখা যাবে না সে সাফল্যকেও।

তবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ও ঐতিহাসিক সাফল্য বলতে বোঝাবে ইংল্যান্ড বধকেই। আর এ সাফল্যের রচয়িতা মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৯ বছর বয়সি এক তরুণের হাত ধরে ইতিহাসের পাতায় এক পা এগুলো বাংলাদেশ। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর বাংলাদেশকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি কটাক্ষ করেছিল ইংল্যান্ডই। সেই ইংল্যান্ডকে ১৬ বছরের ব্যবধানে মাটিতে নামিয়ে আনল বাংলাদেশ। এটাই বাংলাদেশ। যারা লড়তে জানে, জিততে জানে।

ঢাকা টেস্ট জিততে হলে ইংল্যান্ডকে রেকর্ড গড়তে হত। কারণ এশিয়ার মাটিতে তারা সর্বোচ্চ ২০৯ রান তাড়া করে জিতেছিল। কাকতলীভাবে ২০১০ সালে ঢাকায় বাংলাদেশের বিপক্ষেই ২০৯ রান করে জিতেছিল ইংল্যান্ড। সেবার ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি করেছিলেন অ্যালিস্টার কুক। এবার ৫৯ করেও কুক বাঁচাতে পারলেন না দলকে। ১৯৩৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এশিয়ার মাটিতে ৪৭ ম্যাচের ১৭টিতে জিতেছিল ইংল্যান্ড। হেরেছিল ১২টি ম্যাচ। এ ছাড়া ড্র করেছিল ১৮টি ম্যাচ। পরাজয়ের গ্লানিতে যোগ হল আরেকটি নাম, ঢাকা!

মেহেদী হাসান মিরাজ কী দারুণ পারফরম্যান্সই না করলেন। পুরো ম্যাচে বল হাতে ১২ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের একাই ধসিয়ে দিয়েছেন মিরাজ। তার রহস্যময়, দুর্বোধ্য ও বৈচিত্র্যময় বোলিংয়ে দিশেহারা ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। ম্যাচসেরার পুরস্কার তো পেয়েছেনই পাশাপাশি ১৯ উইকেট নিয়ে হয়েছেন সিরাজসেরা।

তৃতীয় দিন চা-বিরতির আগ পর্যন্ত ২৭৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৮৩ মিনিটে স্কোরবোর্ডে শতরান যোগ করে ইংল্যান্ড। মুশফিকের কপালে ভাঁজ! ক্রিকেটারদের শারীরিক ভাষাতেও পাওয়া যাচ্ছিল না জয়ের ক্ষুধা। বেন ডাকেট ও অ্যালিস্টার কুক খুব সহজেই উইকেটের চারিপাশে রান তুলে নিচ্ছিলেন। ৪.৩৪ গড়ে ২৩ ওভারে ১০ চার ও ১ ছক্কায় রান করেন ১০০। কিন্তু চা-বিরতির পর সব পাল্টে গেল।

মিরাজ প্রথম বলে এসেই ফিরালেন ডাকেটকে। ৩ ওভার পর একই ওভারে তার শিকার গ্যারি ব্যালেন্স ও মঈন আলী। মাঝে সাকিব ফেরান ইংলিশ একাদশের সবচেয়ে বিপদজনক ব্যাটসম্যান জো রুটকে। এরপর ইংলিশ শিবিরে আবারও মিরাজের আঘাত। অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক ও জনি বেয়ারস্টোর উইকেট নিয়ে তৃতীয়বারের মত পঞ্চম উইকেটের স্বাদ নেন মিরাজ। তরুণ বল ঘুরাবেন অথচ সাকিব করবেন না তা কি হয়? সফরকারী শিবিরের পরবর্তী ৩ উইকেট সাকিবের পকেটে। বেন স্টোকস, আলীদ রশিদ ও জাফর আনসারির উইকেট নিয়ে ভিন্ন উদযাপন সাকিবের। স্টোকসকে আউট করে গ্যালারির দিকে মুখ করে সাকিবের স্যালুট।

জয়ের জন্য তখনও এক উইকেটের অপেক্ষা। সাকিবের পাঁচ উইকেট হতে লাগে এক উইকেট।

আর মিরাজের বিশ্বরেকর্ড গড়তে এক! কে করবেন সেটা নিয়ে ছিল যন্ত্রণা-কল্পনা? মিরাজ ৬ উইকেট পেলে ভাঙবেন ১২৯ বছরের রেকর্ড। ১৮৮৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি পেসার জন জেমস ফেরিস অভিষেকে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে সর্বোচ্চ ১৮ উইকেট নিয়েছিলেন। মিরাজ স্টিভেন ফিনকে আউট করে ছাড়িয়ে গেলেন ফেরিসকে। ১৯ উইকেট নিয়ে গড়েন বিশ্বরেকর্ড। মিরাজের বল ফিনের গ্লাভসে আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে ষোলো কোটি মানুষের উল্লাস শুরু হয়ে যায়। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ততক্ষণে স্ট্যাম্প নেওয়ার প্রতিযোগিতায়। শেষ পর্যন্ত স্ট্যাম্পের কাছ ঘেঁষে থাকা ফিল্ডাররাই পারলেন ৬টি স্ট্যাম্প নিতে।

দিনের শেষটা যে এতটা মধুর হতে যাচ্ছিল তা সকালে অনুমান করা যায়নি। সকালে ইমরুলকে সঙ্গী করে ব্যাটিংয়ে নামেন সাকিব। ইমরুল ৭৮ রানে ফিরে যাওয়ার পর সাকিব, মুশফিক, সাব্বিরও ফিরে যান মধ্যাহ্ন বিরতির আগে। মধ্যাহ্ন বিরতির পর স্কোরবোর্ড সচল রাখার দায়িত্ব নেন শুভাগত হোম। শেষ পর্যন্ত তাকে অপরাজিত থাকতে হয় ২৫ রানে। বাংলাদেশ ২৯৬ রানের পুঁজি পায়, ইংল্যান্ডকে টার্গেট দেয় ২৭৩।

 
উপদেষ্ঠা সম্পাদক: রিন্টু আনোয়ার ,সম্পাদক: আবুল মনসুর আহমেদ, ঠিকানা : ৩৪, বিজয় নগর, ৪র্থ তলা, ঢাকা।, মোবাইল: +৮৮০ ১৭৫৩-৪১৭৬৭৬, ইমেইল : sheershareport@gmail.com. Developed by: R-itSoft