|
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের মালিক আমজাদ খান চৌধুরী ছিলেন একাত্তরের কুখ্যাত ঘাতকশীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬ প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী মেজর জেনারেল আমজাদ খান চৌধুরী (অব) ছিলেন কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী, বাঙালি বংশোদ্ভূত পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় রংপুর ক্যান্টনমেন্টে বিএম-২৩ বিগ্রেডে মেজর আমজাদ খান চৌধুরীর অধীনে বাঙালি সেনা-মুক্তিযোদ্ধা-সাধারণ মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটে। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সামরিক সমরেও অংশ নেন। রংপুরে অবস্থানকালে তিনি হত্যা, ধর্ষণ এবংহিন্দুদের ঘর-বাড়ি লুটপাটে মদদ দেন। স্বাধীনতা পরবর্তীতে পাকিস্তানে আটকে পড়া সাড়ে ৪ লাখ বাঙালির সাথে দেশে ফিরে ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানে আটকে পড়া সেনা কর্মকর্তা' হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন আমজাদ খান চৌধুরী। জেনারেল শফিউল্লাহ ও জিয়ার সহযোগিতায় তিনি সেনাবাহিনীতে পদোন্নতি পেয়ে মেজর জেনারেল পর্যন্ত হয়েছেন। ১৯৮১ সালে বগুড়া ক্যান্টনমেন্টের জমি অধিগ্রহণের টাকা চুরির অভিযোগে সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসর পেয়ে ব্যবসায় নামেন তিনি। আমজাদ খান চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার যুদ্ধাপরাধী পরিচয়কে আড়াল করে তার ব্যবসায়ী পরিচয় সামনে রেখে গণমাধ্যমে তার মৃত্যুর খবর পরিবেশন করা হয়। এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে শোক প্রকাশও করা হয়। আমজাদ খান ছিলেন কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের সদস্য। কিন্তু মৃত্যুর পর তাকে মুসলিম হিসেবে গণমাধ্যমে পরিচয় দেওয়া হয়। মুসলিম হিসেবে পরিচয় দেওয়ার নেপথ্যে কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় আমজাদ খান চৌধুরী সন্দেহাতীতভাবে একজন যুদ্ধাপরাধী। যুদ্ধাপরাধী আমজাদ খান চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৯ সালের ১০ নভেম্বর। তার পিতা মুসলিম লীগপন্থি রাজনীতিতে বিশ্বাসী আলী কাশেম খান চৌধুরী ও মাতা আমাতুর রহমান। ঢাকার বকশিবাজারের আহমাদিয়াদের (কাদিয়ানী) সেন্টারের পাশে নবকুমার ইনস্টিউটে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। ১৯৫৬ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়ান স্টাফ কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। আজমাদ খানের নির্দেশে রংপুরে বাঙালি সেনা হত্যা: ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীরা বাঙালিদের উপর গণহত্যা শুরু করলে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এর ৪ দিনের মাথায় ৩০ মার্চ রংপুর বিগ্রেড হেডকোয়ার্টারে যাওয়ার পথে ৩য় বেঙ্গল ব্যাটালিয়ানের সিরাজ এবং তার ১০-১২ জন প্রহরীর মধ্যে একজন ছাড়া বাকিদের হত্যা করা হয়। এসময় রংপুর বিগ্রেডের গুরুত্বপূর্ণ বিগ্রেড মেজর পদে আসীন ছিলেন মেজর আমজাদ খান চৌধুরী। কর্নেল শাফায়াত জামিলের লেখায় যুদ্ধাপরাধী মেজর আমজাদ খান চৌধুরী: বাঙালি সেনা হত্যায় আমজাদ খান চৌধুরীর সংশ্লিষ্টতার ঘটনা কর্নেল শাফায়াত জামিল বীরবিক্রম তাঁর ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য আগস্ট এবং ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর' বইয়ের ৫০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন। জামিল লিখেছেন, ‘৩০ মার্চ ৩য় বেঙ্গল ব্যাটেলিয়ানের সিরাজকে রংপুর হেডকোয়ার্টারে একটি কনফারেন্সে যোগ দেয়ার জন্য পাঠানো হয়। তাঁর সঙ্গে ১০-১২ জন প্রহরী ছিল। পাকিস্তানিরা পথে তাঁদের বন্দি করে সেই রাতেই নির্মমভাবে হত্যা করে। দলটির মাত্র একজন সদস্য দৈবক্রমে বেঁচে যায়। পরে সে ৩য় বেঙ্গলের সাথে মিলিত হতে পেরেছিল। উল্লেখ্য তখন রংপুর বিগ্রেডের গুরুত্বপূর্ণ বিগ্রেড মেজর পদে আসীন ছিলেন মেজর আমজাদ খান চৌধুরী। আজমাদ খান চৌধুরীর নির্দেশেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।' মেজর আমজাদ খানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সামরিক যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তার বাংলাদেশ ছেড়ে পাকিস্তান যাওয়া ও বাংলাদেশে ফেরার ব্যাপারে দুটি ভাষ্য পাওয়া যায়। একটি ভাষ্যমতে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সাথে আমজাদ খানও মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। পরে যুদ্ধবন্দী হিসেবে তাকে ভারতে নিয়ে আটকে রাখা হয়। ১৯৭২ সালের ২ আগস্ট ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ঐতিহাসিক সিমলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৭২ সালে ৪ আগস্ট চুক্তি কার্যকর হলে চুক্তির শর্তানুসারে ভারত বিনা বিচারে সকল যুদ্ধবন্দীদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠায়। আমজাদ খানও তাদের সাথে পাকিস্তান চলে যান। আরেকটি ভাষ্যমতে, আমজাদ খান চৌধুরী অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে পাকিস্তানে বদলি হয়ে গিয়েছিলেন। পরে পাকিস্তানে আটকে পড়া সাড়ে চার লাখ বাঙালির সাথে দেশে ফিরে আসেন এবং দেশে ফিরে নিজেকে ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানে আটকে পড়া সেনা কর্মকর্তা' পরিচয় দিয়ে জেনারেল শফিউল্লাহ ও জিয়ার সহযোগিতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে আমজাদ খান চৌধুরী: স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতেও বিতর্কিত ভূমিকা রয়েছে তার। শাফায়াত জামিল-এর বরাতে জানা যায়, ‘তিনি (আমজাদ খান) ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কুমিল্লার বিগ্রেড কমান্ডার ছিলেন এবং তাঁরই নিয়োজিত সেনাদল বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের পাহারার দায়িত্বে ছিলেন। রহস্যজনক ভাবে আক্রমণকারীদের প্রতিরোধে এরা সেদিন ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে সব সম্ভবের দেশে তিনি মেজর পদে উন্নীত হয়েছিলেন।' ১৯৮১ সালে বগুড়া ক্যান্টনমেন্টের জমি অধিগ্রহণের টাকা চুরির অভিযোগে সেনাবাহিনী থেকে তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। অবসরের পর ১৯৮১ সালে সেই চুরির টাকায় গড়ে তোলেন রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেড (আর এফ এল)। ১৯৮৫ সালে গড়ে তোলেন এগ্রিকালচার মার্কেটিং কোম্পানি যার ব্র্যান্ড নাম প্রাণ। একাত্তরের কুখ্যাত এই যুদ্ধাপরাধী ও বাঙালি সেনা হত্যাকারী হলেও ঢাকার সামরিক কবরস্থানে আমজাদ খান চৌধুরীকে কবর দেওয়া হয়। উৎসঃ একাত্তর Read Also : Which Business should I Start |
উপদেষ্ঠা সম্পাদক: রিন্টু আনোয়ার ,সম্পাদক: আবুল মনসুর আহমেদ, ঠিকানা : ৩৪, বিজয় নগর, ৪র্থ তলা, ঢাকা।, মোবাইল: +৮৮০ ১৭৫৩-৪১৭৬৭৬, ইমেইল : sheershareport@gmail.com. Developed by: R-itSoft |