![]() |
জলবায়ু পরিবর্তন : বিরূপ প্রভাব পড়ছে ফসলি জমিতেশীর্ষরিপো্র্ট ডটকম । ৬ জানুয়ারি ২০১৭ ![]() জলবায়ু পরিবর্তন : বিরূপ প্রভাব পড়ছে ফসলি জমিতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততার আগ্রাসন বেড়েই চলেছে। কৃষি বিপর্যয়ের অশনি সঙ্কেত হয়ে দেখা দিচ্ছে লবণাক্ততার আগ্রাসী থাবা। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমান্বয়ে নিচে নেমে যাওয়ায় লবণাক্ততা ভূগর্ভস্থ সুপেয় পানিকেও গ্রাস করতে চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে গোটা দক্ষিণ উপকূল অঞ্চলের নদ-নদী ও ফসলি জমিতে। প্রতি বছর লবণাক্ততার আগ্রাসী থাবায় উপকূলীয় জনপদ ক্রমেই পরিণত হচ্ছে বিরানভূমিতে। ২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং তৎপরবর্তী আইলায় বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কারের অবহেলায় গোটা উপকূলীয় জনপদ ও ফসলি জমি দ্রুত লবণাক্ত হয়ে আবাদহীন হয়ে পড়ছে। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, পানিতে লবণাক্ততার সহনীয় মাত্রা ২০০ পার্সপার মিলিয়ন (পিপিএম)। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে লবণাক্ততার সহনীয় মাত্রা তিনগুণ বেশি ছয় শ' পিপিএম; কিন্তু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নলকূপগুলো থেকে যে পানি উঠছে, তাতে লবণাক্ততার পরিমাণ সহনীয় মাত্রার চেয়ে ঢের বেশি। পিরোজপুর জেলার নলকূপের পানিতে এখন লবণাক্ততার মাত্রা সাত শ' পিপিএম। কাছের জেলাগুলোর অবস্থা প্রায় অভিন্ন। আগে শহরাঞ্চলে নয় শ' থেকে এক হাজার ফুট এবং গ্রামাঞ্চলে সাত শ' থেকে আট শ' ফুট গভীর নলকূপ থেকে সুপেয় পানি পাওয়া যেত। এখন শহরাঞ্চলে এক হাজার থেকে বার শ' ফুট এবং গ্রামাঞ্চলে আট শ' থেকে এক হাজার ফুট গভীর নলকূপ না বসালে সুপেয় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। কোথাও কোথাও লবণাক্ততার মাত্রা চার হাজার পিপিএম পর্যন্ত পৌঁছেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পানিতে লবণাক্ততা বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। জলবায়ু পরিবর্তনের অনিবার্য পরিণতিতে দেশের দক্ষিণ উপকূলজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বাড়ছে, তেমন বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় নিচে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। ভারত থেকে আসা নদীগুলোর উৎসমুখে বাঁধ দেয়ায় সুপেয় পানির উৎস সঙ্কুুচিত হচ্ছে। তার বদলে নদ-নদীতে ঢুকছে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি। কৃষিজমিতেও লবণাক্ত পানির আগ্রাসন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ![]() এত বড় ধরনের পরপর দু'টি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ায় দক্ষিণের উপকূল অঞ্চলের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো দ্রুত মেরামত বা সংস্কারে শ্লথগতির কারণে বর্ষা মওসুমে উপকূলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়ে আরো ভেতরে লবণ পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এর ফলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে শুরু করেছে উপকূল অঞ্চলে। এ সময় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সর্বোচ্চ মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিস্তীর্ণ অঞ্চলে লবণাক্ততার করাল গ্রাস ঘটে। বাংলাদেশ মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের এক জরিপ অনুযায়ী, দেশের উপকূলীয় জনপদের প্রায় ২০ লাখ হেক্টর জমি কম লবণাক্ত। প্রায় ৮০ লাখ হেক্টর জমি ঈষৎ লবণাক্ত, ছয় লাখ ৬১ হেক্টর জমি মধ্যম লবণাক্ত এবং প্রায় সাত লাখ হেক্টর জমি খুব বেশি লবণাক্ত। তাদের পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, ১৯৭৩ সালে দেশের আট লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে লবণাক্ততা ছিল, ২০১০ সালে এমন জমির পরিমাণ ১০ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টরে পৌঁছেছে। উপকূলভাগের কৃষিজমির ৩০ শতাংশই এখন লবণাক্ততার শিকার। ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে কৃষিজমির পরিমাণ জনসংখ্যার তুলনায় কম। সে জমির উল্লেখযোগ্য অংশ লবণাক্ততার শিকার হওয়ায় কৃষির জন্য বিপর্যয়ের হাতছানি দিচ্ছে। এ সমস্যার মোকাবেলায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। কিভাবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে লবণাক্ততার অভিশাপ থেকে রক্ষা করা যায়, সে পথ খুঁজে বের করতে হবে। লেখক : অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট e-mail: advahmed@outlook.com |
উপদেষ্ঠা সম্পাদক: রিন্টু আনোয়ার ,সম্পাদক: আবুল মনসুর আহমেদ, ঠিকানা : ৩৪, বিজয় নগর, ৪র্থ তলা, ঢাকা।, মোবাইল: +৮৮০ ১৭৫৩-৪১৭৬৭৬, ইমেইল : sheershareport@gmail.com. Developed by: R-itSoft |