অক্টোবরে শিশু হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে


শীর্ষরিপো্র্ট ডটকম ।  ২  নভেম্বর  ২০১৬

অক্টোবরে শিশু হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে

অক্টোবরে শিশু হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে



অক্টোবর মাসে শিশু হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। এছাড়াও নারী ধর্ষণ, গণধর্ষণ, পারিবারিক ও সামাজিক কোন্দলে আহত ও নিহত, গৃহকর্মী নির্যাতন ও খুন, নারী নির্যাতন, রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ছিল উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার (বিএমবিএস) মাসিক পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে এ চিত্র সামনে এসেছে।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার (বিএমবিএস) কমিউনিকেশন অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন কর্মকর্তা ফাতেমা ইয়াসমিনের স্বাক্ষরিতে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করে সংস্থাটি।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার অক্টোবর মাসের মনিটরিং-এ পাওয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়:

ক্রসফায়ারে নিহত: অক্টোবর মাসে ক্রসফায়ারে মৃত্যু হয় ২২ জনের, এর মধ্যে পুলিশের হাতে নিহত হয় ১০ জন এবং র‌্যাব কর্তৃক নিহত ১১ জন ও যৌথবাহিনীর হাতে একজন। এ মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গি নিধন অভিযানে ১১ জঙ্গি নিহত হয়েছে।

ধর্ষণ: অক্টোবরে মোট ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪৪ জন নারী ও শিশু। এদের মধ্যে শিশু ১৯ জন। ১৪ জন নারী। ১০ জন নারী গণধর্ষণের শিকার হন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় একজনকে। হবিগঞ্জের বাহুবলে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে অপহরণ করে জোড়পূর্বক রাতভর গণধর্ষণ করে একদল দুর্বৃত্ত। দিনাজপুরে ৫ বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনা সারাদেশে নিন্দার ঝড় তোলে। তাছাড়া ১৪ জন নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে এ মাসে।

শিশু হত্যা: অক্টোবর মাসে ১৫ শিশুকে হত্যা করা হয়। নির্যাতনের শিকার হয় ১০ জন শিশু। সিলেটে স্বামী-স্ত্রীর কলহের জেরে বাবা খুন করে তার দুই সন্তানকে। রাজধানীতে পাওনা টাকা আদায় করতে না পেরে এক রিক্শাচালকের শিশু কন্যাকে হত্যা করে পাওনাদার।

যৌতুক: অক্টোবরে যৌতুকের কারণে প্রাণ দিতে হয়েছে তিনজন নারীকে। নির্যাতনের শিকারও হয় পাঁচজন। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে দুই লাখ টাকা যৌতুকের জন্য সন্ধ্যা নামে এক গৃহবধূকে অমানবিক নির্যাতন করে তার স্বামী। ঢাকার কেরানীগঞ্জে মারমীন নামের এক গৃহবধূকে যৌতুকের দাবিতে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে স্বামী।

সামাজিক অসন্তোষ: সামাজিক অসন্তোষের শিকার হয়ে অক্টোবরে নিহত হয়েছেন ১৪ জন। আহত হয়েছেন ৩০৭ জন। শেরপুরের নকলায় টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। সামাজিক সহিংসতায় আহত ও নিহতের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুনামগঞ্জে জমি নিয়ে বিরোধের জেড়ে ৪০ জন আহত হয়। বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটে জমিজমা, দুই গ্রামের খেলা নিয়ে সংঘর্ষ বা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে।

 

পারিবারিক কলহ: পারিবারিক কলহে অক্টোবর মাসে নিহত হন ১৭ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ৯ জন, নারী ৮ জন। তাছাড়া বিভিন্ন কারণে এ মাসে স্বামীর হাতে নিহত হন ২৬ জন নারী। পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, রাগ, পরকীয়াসহ বিভিন্ন পারিবারিক কারণে এসব মৃত্যু হয়।

আত্মহত্যা: অক্টোবরে আত্মহত্যা করেছে ৪৬ জন। এদের মধ্যে ১৭ জন পুরুষ ও ২৯ জন নারী। পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, অভিমান, রাগ ও যৌন হয়রানি, পরীক্ষায় খারাপ ফল, এমনকি পছন্দের পোশাক কিনতে না পারার কারণেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।

খুন: অক্টোবর মাসে দেশে সন্ত্রাসী ঘটনায় নিহত হন ১০২ জন ও আহত হয় ৯১ জন। রাজধানীর বনানীতে একটি বহুতল ভবনে ইডেন কলেজের সাবেক অধ্যাপককে হাত-পা বেঁধে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। মানিক মিয়া নামে এক পুলিশের সোর্সকে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় রাজধানীতে।

অন্যান্য ঘটনা: অক্টোবর মাসে ৫ জন এসিড নিক্ষেপের শিকার হয়। মাদকের প্রভাবে বিভিন্নভাবে নিহতের সংখ্যা ৫ জন, আহত হয় ১৬ জন। সড়ক দুর্ঘটনায় এ মাসে নিহত ২৭৭ ও আহত ৪২০ জন। তাছাড়া পানিতে ডুবে, অসাবধানবশত, বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয়ে, বজ্রপাতে মৃত্যুবরণ করেছে ৯৫ জন। গণপিটুনিতে নিহত হয় ৪ এবং আহত হয় ১৬ জন।

এছাড়া ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী কর্তৃক নিহত হয় ১ জন, আহত ৯ জন। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয় ৯ জনের। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দমন অভিযানের নামে গণগ্রেফতার করা হয় ৩৮৯ জনকে। এ মাসে রাজশাহী, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার, ঝিনাইদহ ও মুন্সিগঞ্জ থেকে ১৮ জন নিখোঁজ হয়।

সংস্থা মনে করে, মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে থাকলে দেশের অগ্রগতি ব্যহত হবে, সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণ, আইনের সঠিক প্রয়োগ, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নৈতিক অবক্ষয় রোধে বিভিন্ন পর্যায়ে কাউন্সিলিং, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশিক্ষণ, ভালো কাজের পুরস্কার, সামাজিক সংগঠনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম, স্কুল-কলেজে সচেতনতার কার্যক্রম, মিডিয়ায় সম্প্রচারের মাধ্যমে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা ৭৯ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার তথ্য সংরক্ষণ করে। এ মাসে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সার্বিক গবেষণ তথ্য মোতাবেক, এসব ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত (আহত ও নিহত) হয় মোট ২৩৩৩ জন নারী, পুরুষ ও শিশু।
উপদেষ্ঠা সম্পাদক: রিন্টু আনোয়ার ,সম্পাদক: আবুল মনসুর আহমেদ, ঠিকানা : ৩৪, বিজয় নগর, ৪র্থ তলা, ঢাকা।, মোবাইল: +৮৮০ ১৭৫৩-৪১৭৬৭৬, ইমেইল : sheershareport@gmail.com. Developed by: R-itSoft